ইসরায়েলে নতুন করে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান কাছের মানুষকে আলিঙ্গন করা কেন জরুরি? একদিনে আরও ২৬ জনের করোনা শনাক্ত, মৃত্যু ১ পাল্টা হামলার মুখে যাত্রী ছাড়াই বিদেশে বিমান সরিয়ে নিচ্ছে ইসরায়েল জাতীয় নির্বাচনের তারিখ নিয়ে সমাঝোতা একটি ইতিবাচক দিক : আতিকুর রহমান জামায়াতের ১নং ওয়ার্ড কর্তৃক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত নাগেশ্বরীতে বাণিজ্যমেলা বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন রায়গঞ্জে মাছ ধরতে গিয়ে পানিতে ডুবে ভাই বোনের মর্মান্তিক মৃত্যু সাতক্ষীরা কালিগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতা মোজাহার হোসেন কান্টু গ্রেপ্তার শ্রীপুরে দফায় দফায় হামলা ও ভাঙচুর, অর্ধশতাধিক বাড়িঘর ও দোকানপাটে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ লালপুরে জামায়াতের ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত লালপুরে বিএনপির ঈদ পুনর্মিলনীতে জনতার ঢল! ঈশ্বরগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় ১ জন নিহত সাবেক সংরক্ষিত এমপি’র বাড়িতে যৌথবাহিনীর অভিযান: ইয়াবা-অস্ত্রসহ পুত্র আটক সুন্দরগঞ্জে জামায়াত কর্মী হত্যা মামলায় যুবলীগ নেতা আজম কারাগারে কালাইয়ে দুধর্ষ ডাকাতির ঘটনায় চিকন আলী নামে এক আন্তজেলা ডাকাত দলের সদস্য গ্রেপ্তার পাঁচ ব্যাংক মিলে হচ্ছে এক ব্যাংক, চাকরি হারাবেন না কর্মীরা নেতানিয়াহুর জন্য বিশ্ব আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে’ গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হককে অবরুদ্ধের প্রতিবাদে পীরগাছায় মশাল মিছিল সড়ক দুর্ঘটনায় লালপুরের যুবকের মৃত্যু

স্মৃতিচারণ: মাওলানা মুহাম্মদ ফখরুদ্দীন (রাহ.)

স্মৃতিচারণ:  মাওলানা মুহাম্মদ ফখরুদ্দীন (রাহ.)


আবু নছর আতীক আহমদ।

সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ সুবহানুহু ওয়া তা’আলার নিমিত্ত যিনি স্বীয় কৃপায় মানবকুলের হিদায়ত ও তা'লীম তরবিয়্যতের উদ্দেশ্যে তদীয় প্রিয়তম রসূল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ ধরাধামে প্রেরণ করেছেন।  অযূত কোটি দুরূদ ও সালাম মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি যিনি আমাদেরকে দু'জাহানের কল্যাণ ও মুক্তির পথ প্রদর্শন করেছেন। সবশেষে মহান আল্লাহ পাকের দরবারে জানাই কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা আমাদের মাতা-পিতা ও পিতৃপ্রতিম আসাতিযায়ে কেরামের মাগফিরাত ও রফ'য়ে দরজাতের যাদের কাছে আমরা আপাদমস্তক ঋণে আবদ্ধ।
যে মহান মনিষীকে উপলক্ষ করে আমার লিখনির ক্ষুদ্র এ প্রয়াস সে মহান ব্যক্তিত্ব মাওলানা মুহাম্মদ ফখরুদ্দীন (রাহ.) ছিলেন এক বহুমুখী প্রতিভা। একাধারে তিনি ছিলেন একজন প্রথিতযশা মুহাদ্দিস, মুফাসসির, ফকীহ ও আদর্শ শিক্ষক এবং দক্ষ প্রশাসক (অধ্যক্ষ)। তার ঘটনা বহুল জীবনের স্মৃতিচারণ এবং এতদ প্রাসঙ্গিক বিষয়ে কিছু লেখার সুযোগ পেয়ে আমি মহামহিম আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। الحمد لله وما توفيقي إلا بالله، عليه توكلت، وإليه أنيب
প্রেক্ষিত বিবেচনায় আমি সম্পূর্ণ আলোচ্য বিষয়কে পৃথকভাবে তিনটি স্তরে বিন্যস্ত করে তুলে ধরতে সচেষ্ট হবো ইন শা আল্লাহ। 
🔰প্রথম স্তরঃ 
এই অধ্যায়ে আমাদের পারস্পরিক সম্পর্কের সূচনা প্রসংগটি হচ্ছে মুখ্য। মাওলানা মুহাম্মদ ফখরুদ্দীন (রাহ.) এর আব্বাজান মুফতী মাওলানা শফিউর রহমান (রাহ.) ছিলেন আমার নানাজান শাহ মাওলানা নজীর আহমদ (রাহ.) এর প্রিয়তম ছাত্র। এভাবে 'ইলমি ওয়ারাসাতের ভিত্তিতে আমাদের পারস্পরিক সম্পর্কের সূত্রপাত। উপমহাদেশের অন্যতম প্রসিদ্ধ আধ্যাত্মিক সাধক হাফেজ হামেদ হাসান আলভী আজমগড়ী (রাহ.) এর সুযোগ্য খলীফা শাহ মাওলানা নজীর আহমদ (রাহ.) ছিলেন তৎকালীন বৃহত্তম চট্টগ্রাম জেলার স্বনামধন্য মাদ্রাসা চন্দনপুরা দারুল উলুম আলিয়া মাদ্রাসার হেড মাওলানা। তাঁর অনেক ছাত্র বাংলাদেশের ইতিহাসে মুফতি, মুহাদ্দিস, মুফাসসির, খতীব, লেখক, পীর এবং শিক্ষাবিদ হিসাবে প্রসিদ্ধি লাভ করেছেন। তন্মধ্যে মুফতি মাওলানা শফিউর রহমান ছাড়াও নিম্ন বর্ণিত কয়েকজনের নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য। শাহ মাওলানা মীর আখতার (রাহ.)- প্রতিষ্ঠাতা, বাইতুশ শরফ, চট্টগ্রাম। ফখররল মুহাদ্দেসীন মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ আমীন (রাহ.), শাইখুল হাদীস, দারুল উলুম আলিয়া মাদ্রাসা, চট্টগ্রাম। শাহ মাওলানা হাফেজ আহমদ (রাহ.) প্রকাশ শাহ সাহেব, চুনতী। শাহ মাওলানা আব্দুল মালেক (রাহ.) প্রকাশ শাহ সাহেব, কুতুবদিয়া। শাহ মাওলানা আব্দুল মজীদ (রাহ.) প্রকাশ বড় হুজুর, প্রতিষ্ঠতা, গারাংগিয়া আলিয়া মাদ্রাসা ও পীর সাহেব গারাংগিয়া। মুফতি মাওলানা নূর মুহাম্মদ আজমী (রাহ.), মুফাসসিরে কুরআন, ঢাকা। মাওলানা আবু তাহের মুহাম্মদ নাজের (রাহ.) প্রকাশ সুপারিন্টেন্ডেন্ট সাহেব হুজুর, চুনতী। প্রফেসর ড. মাওলানা আব্দুল গফুর (রাহ.), চট্টগ্রাম। মাওলানা ওবায়দুল হক (রাহ.), অধ্যক্ষ, ফেনী আলিয়া মাদ্রাসা। মাওলানা আবুল খায়র (রাহ.) মুহাদ্দিস, ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা প্রমুখ।  
🔰দ্বিতীয় স্তরঃ   
এই অধ্যায়ে আমাদের পারস্পরিক সম্পর্কের উত্তরণ ঘটে মাওলানা ফখরুদ্দীন (রাহ.) এর বৈবাহিক সূত্রকে কেন্দ্র করে। তিনি আমাদের চুনতী গ্রামের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন ও শিক্ষাবিদ মাওলনা আব্দুন নূর ছিদ্দীকী (রাহ.) এর বড় কন্যার সাথে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন। মাওলানা আব্দুর নূর ছিদ্দীকী (রাহ.) ঐতিহ্যবাহী চুনতী গ্রামের প্রখ্যাত আধ্যাত্নিক সাধক গাজীয়ে বালাকোট মাওলানা আব্দুল হাকীম ছিদ্দীকী (রাহ.) প্রকাশ বড় মাওলানা সাহেবের বংশধর। আমাদের মাতামহ এবং পিতামহ সূত্রে বড় মাওলানা সাহেব আমাদের ও উর্ধ্বতন পুরুষ। এদিক দিয়ে বৈবাহিক সূত্রে মাওলানা ফখরুদ্দীন (রাহ.) আমাদের আত্নীয় এবং সম্পর্কে তিনি আমাদের জামাতা। আমরা পরস্পর মামাসম্বোধন করতাম। উল্লেখ্য যে, মাওলানা আব্দুল হাকীম (রাহ.) এর বড় সন্তান ওয়াজিহুদ্দীন সামী (রাহ.) সর্বপ্রথম চুনতী গ্রামে একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন যার নাম ছিল সামিয়া মাদরাসা। অপরদিকে মাওলানা নজীর আহমদ (রাহ.) মাওলনা আব্দুল হাকীম (রাহ.) এর ইন্তিকালের প্রায় ৫০ বছর পরে ১৯৩৭ ইং সনে চুনতী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করলে বড় মাওলানা সাহেবের স্মরণে এর নামকরণ করেন চুনতী হাকিমিয়া (কামিল) মাদ্রাসা। এই মাদ্রাসার প্রতি ঐতিহাসিক কারণে মাওলানা ফখরুদ্দীন (রাহ.) সাহেবের বিশেষ ভালবাসা  ছিল। তাই চাকুরী থেকে অবসর পরবর্তী সময়ে এই মাদ্রাসায় দরসে হাদীসের জন্য অনুরুদ্ধ হলে তিনি তা সানন্দে গ্রহন করন এবং আমৃত্যু এর খেদমতে তিনি আত্ননিয়োগ করেন। শ্বশুর বাড়িতে আসলে তিনি চুনতী মাদ্রাসায় গমন করতেন। মাদ্রাসার দুইজন উস্তাদ হেড মাওলানা কামাল উদ্দীন মূসা খতিবী (রাহ.) ও প্রধান মুহাদ্দিস মাওলানা আব্দুল হাই নিজামীর সাথে তাঁর ছিল ঘনিষ্ট সম্পর্ক। তাঁর শ্বশুর বড় মেহমান নওয়াজ ছিলেন। জামাই বেড়াতে আসলে অনেক সময় মাদ্রাসার প্রবীণ উস্তাদদেরকে নাস্তার দাওয়াত দিতেন। সে দাওয়াত থেকে আমি কখনো বঞ্চিত হতামনা। মাওলানা আব্দুন নূর সিদ্দিকীর তিন ছেলের মধ্যে রফিক সিদ্দিকী ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার প্রথিতযশা ছাত্র। তিনি চট্টগ্রাম দারুল উলুম আলিয়া মাদ্রাসা থেকে কামিল প্রথম শ্রেণীতে পাস করেন। আমার ভাই ড. আবু ওমর ফারুক আহমদ (প্রফেসর কিং আব্দুল আজিজ ইউনিভার্সিটি জেদ্দা) তাঁর সহপাঠী ছিলেন। রফিক সিদ্দিকী সাম্প্রতিক কালে ইন্তেকাল করেছেন। মেজো ছেলে জুবায়ের সিদ্দিকী আধুনগর ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা সহকারী অধ্যাপক।  
১৯৮৩ ইংরেজি সনের গোড়ার দিকের ঘটনা। মাওলানা ফখরুদ্দিন সাহেব শ্বশুর বাড়ি এসেছেন মর্মে অবগত হয়ে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতে যাই। অনেক আলাপচারিতার মাঝে তাঁর কাছে আমি মাদ্রাসা-ই-আলিয়া, ঢাকার মাধ্যমে কামিল ফিক্বহ গ্রুপে প্রাইভেট পরীক্ষা দেয়ার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করলাম। তিনি বললেন, ‘মামা, ভবিষ্যতে কামিল পড়ানোর মতো শিক্ষকের খুবই অভাব হবে। আপনি শুধু প্রাইভেট পরীক্ষা না দিয়ে আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে ক্লাস করাটাই আমি সমীচীন মনে করি’। তাঁর উৎসাহ ও পরামর্শে আমি অন স্টাডি লিভ ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসায় ফিক্বহ বিভাগে ভর্তি হই। ১৯৮৪ ইং সালে কামিল ফিক্বহ বিভাগের পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার, কালক্রমে মাস্টার্স পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ও প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হওয়া, সর্বশেষ ২০০৩ ইংরেজি সনে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হয়ে প্রেসিডেন্ট স্বর্ণপদকে ভূষিত হওয়া, আমার সকল সাফল্যের মূলে আমি তাঁর সেদিনকার উৎসাহ ও অনুপ্রেরণার ফলশ্রুতি দেখতে পাই। 
সরকারী মাদ্রাসা-ই-আলিয়ায় অধ্যয়নকালের অনেক ঐতিহাসিক স্মৃতি আমার হৃদয় পটে স্মরনণীয় হয়ে থাকবে তন্মধ্য থেকে সংক্ষিপ্তাকারে কিছু স্মৃতি তুলে ধরছি। আমাদের সময়ে কামিল ফিক্বহ বিভাগে সিলেটের ইব্রাহিম আলী ভাই (ড. ইব্রাহিম আলী), মুঈনুদ্দিন সিরাজী ভাই, মোহাম্মদ ইব্রাহিম, টাঙ্গাইলের সাইফুল ভাই (ড. আ.ব.ম. সাইফুল ইসলাম, প্রফেসর, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া), আব্দুল মান্নান ভাই (মরহুম মাওলানা আব্দুল মান্নান) ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। ক্লাসে উস্তাদদের দেয়া দরস এরা প্রায়শঃ তক্বরার করতেন। বিশেষভাবে যারা একই সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও ভর্তি ছিলেন তারা এই তকরারে বেশী যোগ দিতেন। আমারও মাঝেমধ্যে অংশ নেয়ার সুযোগ হতো। এসব মেধাবীদের মিলন মেলায় নিজেকে একজন সাধারণ ছাত্রের মতো মনে হতো। কামিল ফাইনাল পরীক্ষায় আমি ভাগ্যক্রমে প্রথম স্থান অধিকার করি। ইব্রাহিম আলী ভাই হন দ্বিতীয়। সরকারি আলিয়া মাদ্রাসার মাধ্যমে স্কলারশিপ নিয়ে ইব্রাহীম আলী ভাই সৌদি আরব চলে যান এবং অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে সেখান থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। অপরদিকে আমি প্রথম হয়েও ব্র্যাক স্টাডির কারণে সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলেও অন্যদিক দিয়ে আল্লাহ তা’আলা আমাকে এর চেয়ে উত্তম দানে অভিষিক্ত করেছেন। আলহামদুলিল্লাহ, ইতোমধ্যে আমার ছেলে-মেয়েদের প্রায় লেখাপড়া শেষ করে স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে। আরো বেশী আল্লাহর শোকর আদায় করেছি এজন্য যে আমার সব সন্তান-সন্ততি উচ্চতর শিক্ষার সাথে সাথে মাদ্রাসা ব্যাকগ্রাউন্ড। আমি দেশে না থাকলে ইহা সম্ভব হত না বলে আমার দৃঢ়বিশ্বাস।
 
তৃতীয় স্তরঃ
এই স্তরে আমাদের পারস্পরিক সম্পর্ক ঘনিষ্ঠতার উচ্চ মাত্রায় উন্নীত হয়। সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা থেকে অধ্যক্ষ হিসেবে অবসর গ্রহণ করার পর আমার বড় ভাইয়ের আহবানে তিনি ২০০৬ সালে চুনতী মাদ্রাসায় শাইখুল হাদীস হিসেবে যোগ দেন। তখন আমি অধ্যক্ষের দায়িত্বে (ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ) ছিলাম। আমার দায়িত্বকালীন প্রায় পাঁচ বছর তিনি ছিলেন আমার পরম সুহৃদ, একজন অভিভাবক ও অন্যতম প্রেরণার উৎস। রুটিন প্রণয়ন থেকে শুরু করে অভ্যন্তরীণ ও ফাইনাল পরীক্ষা পরিচালনা, প্রশাসনিক কার্যাবলী সম্পাদন সর্বক্ষেত্রে তিনি ছিলেন আমার অন্যতম সহযোগী। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়ার অধিভুক্তির সাথে সাথে কামিল পরীক্ষার কেন্দ্র পটিয়া সদরে স্থানান্তরিত হলে পরিবেশ ও দূরত্বের কারণে নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হই। এমতাবস্থায় পরীক্ষা চলাকালীন এই বৃদ্ধ বয়সে তিনি আমার সাথে পরীক্ষা কেন্দ্রে যাতায়াত করতেন এবং ছাত্রদেরকে উৎসাহ ও সাহস প্রদান করতেন। তার আন্তরিকতা ও পরম সহযোগিতার কারণে ২০১০ সালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত প্রথম পরীক্ষায় কামিলে চুনতী মাদ্রাসা সেরা দশের আট নম্বরে স্থান পায়। দাখিল পরীক্ষায় ২৯ জন ছাত্র এ প্লাস অর্জন করে যার মধ্যে ১৮ জনই গোল্ডেন এ প্লাস প্রাপ্ত ছিল। চুনতি মাদ্রাসার ইতিহাসে তা ছিল স্মরণীয় রেকর্ড। ছাত্রসংখ্যাও স্মরণকালের রেকর্ড ভঙ্গ করেছিল। শিক্ষকের একটি ক্ষুদ্র অংশ এবং গভর্নিং বডির দু একজন প্রভাবশালী সদস্য আমার দায়িত্ব গ্রহণের বিষয়টি সহ্য করতে পারেননি। অথচ সাবেক অধ্যক্ষ হঠাৎ পদত্যাগ করলে উপাধ্যক্ষ হিসেবে সে দায়িত্ব আইনানুগভাবে নিতে আমি ছিলাম বাধ্য। এদিকে সদ্য বিলুপ্ত গভর্নিং বডির সেক্রেটারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে গঠিত নতুন কমিটিতে স্থান না পেয়ে আমার বিরুদ্ধে আদাজল খেয়ে মাঠে নেমে পড়েন। তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিরীক্ষা ও পরিদর্শন অধিদপ্তরের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি দ্বারা সরেজমিনে আমার পুরো পিরিয়ড অডিট ও তদন্ত একসাথে পরিচালনার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। আল্লাহ পাকের অশেষ রহমতে প্রকাশিত ৩৫ পৃষ্ঠাব্যাপী রিপোর্টে তিনি আমার বিরুদ্ধে পঠাতে পারেননি। উল্লেখ্য যে, অধ্যক্ষ মহোদয় পদত্যাগ করে সীতাকুণ্ড আলিয়া মাদ্রাসায় যোগদান করার কারণে আমার উপর দায়িত্ব ন্যস্ত হয়। এমতাবস্থায় প্রধান মুহাদ্দিস সাহেবও অবসরে চলে যান। অধ্যক্ষ ও প্রধান মুহাদ্দিস দুজনের বিদায়ে কামিল ক্লাসের লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম। প্রধান মুহাদ্দিস সাহেবকে অনেক অনুনয়-বিনয় করেও কিছুদিনের জন্য হলেও দায়িত্বে থাকতে রাজী করানো সম্ভব হলো না। অবশ্যই এর পেছনে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী অংশটির ভূমিকা ছিল। আমার দায়িত্ব পালনকালে এই কঠিন মুহূর্তে মাওলানা ফখরুদ্দিন সাহেব আমার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে “খিজিরে রাহনুমা” হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, আমার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ থাকাকালীন দীর্ঘ পাঁচ বছর যাবত মুহাদ্দিস সাহেব চুনতী গ্রামেই ছিলেন এবং আমার পরে যোগদানকারী অধ্যক্ষের রুটিনে বরাদ্দ কামিল ক্লাসের বুখারী শরীফ (প্রথম পত্র) অধ্যক্ষের পরিবর্তে তিন বছর স্বয়ং তিনিই দরস দিয়েছেন। এর মধ্যেই নিহিত রয়েছে তার সম্পর্কে আমার করা মন্তব্যের যথার্থতা।
শাইখুল হাদীস সাহেব আমাকে অত্যাধিক স্নেহ করতেন আমার প্রটোকলও মেনে চলতেন। একবার আমার পারিবারিক সূত্রে প্রাপ্ত আমার জমি সংলগ্ন কিছু জমি বিক্রি হচ্ছে শুনে আমি তা খরীদ করতে মনস্থ করি। কিছু টাকা অপূরণ থাকায় খুবই চিন্তায় পড়ে গেলাম বিষয়টি তাকে জানিয়ে দোয়া চাইলাম। দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার। বৃহস্পতিবার বাড়ি যাবার সময় তিনি আমাকে বললেন, “মামা, আমি সোমবার আসবো। দুইদিন ছুটিতে থাকবো”। সোমবার মাদ্রাসার ছুটির পর চিরাচরিত নিয়মানুযায়ী আমি তাঁর রুমে যাই। কথাবার্তা শেষে তিনি জনতা ব্যাংকের একটি খাম আমার হাতে দেন। খুলে দেখি ভেতরে ক্যাশ এক লক্ষ টাকা। বাইরেও খুব সুন্দর করে টাকার সংখ্যা লেখা আছে এবং এর নিচে তাঁর হাতের স্বাক্ষর। তাঁর এ মহানুভবতার কারণেই আমার পক্ষে ঐ জমিটুকু  খরীদ করা সম্ভব হয় আমার এক কঠিন দুঃসময়ে যখন দীর্ঘ ছয় বছর ধরে অধ্যক্ষ আমার পিএফ সহ প্রাতিষ্ঠানিক যাবতীয় আর্থিক সুবিধা অন্যায়ভাবে স্থগিত রাখা হয়েছিল তখন ঐ জমির অংশ বিশেষ বিক্রি করে আমি মেডিকেলে অধ্যায়নরত দুই ছেলেও এক মেয়ের বিরাট অংকের খরচ চালিয়ে যেতে সক্ষম হই। সে জমিটি ক্রয় করতে না পারলে হয়তো তাদের পড়ালেখা মাঝপথে বন্ধ হয়ে যেত। শায়খুল হাদীস সাহেবের সেই অবদান আমার জীবনে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। যতদিন তিনি জীবিত ছিলেন আমি সম্পূর্ণ দুশ্চিন্তামুক্ত থেকে স্বীয় দায়িত্ব পালনে ব্রতী ছিলাম। তাঁর ইন্তিকালে নিজেকে অসহায় ভাবছিলাম এমন অবস্থায় বর্তমান সরকার নিয়োগ বিধি শিথিল করে নিয়োগ প্রক্রিয়ার ঘোষণা দিলে শেষ সময়ে আমার এক ছাত্রকে যিনি একটি ফাজিল মাদ্রাসার সিনিয়র প্রভাষক এবং আমার দায়িত্বকালীন সময়ে মাদ্রাসার গভর্নিং বডির অভিভাবক সদস্য ছিলেন নিজ উদ্যোগে তাকে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করি। খুবই দুঃখজনক ও বিস্ময়ের বিষয় হলেও সত্য যে তার অধ্যক্ষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি সব অতীত বিস্মৃত হয়ে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী অংশটির ক্রীড়নকে পরিণত হন। আমার শিক্ষকতা জীবনের শেষ কয়েকটি বছর ধৈর্য্য সহকারে আমি কী মানসিক যন্ত্রণার মাধ্যমে কাটিয়েছি তা একমাত্র মহান আল্লাহই জানেন। একবার মাদ্রাসার লেখাপড়ার মান উন্নয়ন বিষয়ক আলোচনার জন্য গভর্নিং বডি, শিক্ষকমন্ডলী এবং তোলাবায়ে সাবেক্বীন এই তিন পক্ষীয় বৈঠকের আয়োজন করা হয়। সে বৈঠকে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের অন্যতম একজন সিনিয়র শিক্ষক আমার প্রিয় ছাত্র বক্তব্যে  শায়খুল হাদিস আল্লামা ফখরুদ্দীন এর বিরূপ মন্তব্য করেন   একই সাথে দাবী করেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের আমলে ফাজিল শ্রেণীর কোন রুটিনই ছিল না। আমার উপস্থিতিতে যে প্রিয় ছাত্রটি একজন মৃত্যুবরণ কারী মুহাদ্দিসের শানে এমন বুহতানমুলক চরম মিথ্যাচার করতে পারলেন, আমি প্রতিবাদ করলে সে আমাকে যে দৈহিকভাবে ও আক্রমণ করতে পারবে না তার কি নিশ্চয়তা আছে। শায়খুল হাদীস সাহেবের কারণে তাদের ষড়যন্ত্র মাঠে মারা গিয়েছিল বলেই তার ইন্তেকালের পরেও তার সম্পর্কে এমন অকল্পনীয়, অবাস্তব ও বুহতানমূলক কথা বলার সাহস তিনি করেছিলেন। চুনতী  মাদ্রাসার মত একটি ঐতিহ্যবাহী মাদ্রাসায় পড়ুয়া ও অতি সচেতন ছাত্ররা এরকম কোন ক্লাসের রুটিন না পেলে ছাত্ররা যে চুপ করে থাকবে অথবা শিক্ষকগণ তাদের ক্লাসের সুযোগ না পেলে বসে বসে সময় কাটাবেন কখনো সত্য হতে পারে না। 
শায়খুল হাদীস সাহেবের ইন্তেকালের পরে সেই একই ব্যক্তি শায়খুল হাদিস সাহেব কর্তৃক ছাত্রদেরকে দেওয়া অমূল্য অসাধারণ নোট ছাত্রদের কাছ থেকে  সংগ্রহ করেছিলেন।যা উনার কপটতার বহিঃপ্রকাশ ছাড়া কিছু নয়।শাইখুল হাদিস সাহেবের নোটগুলো ছাত্রদের ভালো পড়াশোনা ও ফলাফলে অনন্য ভূমিকা রেখেছিল।         
আমি মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে লাখো কোটি শুকরিয়া জ্ঞাপন করি এজন্য যে এতো বড় একজন  শাইখুল হাদিসকে এতদঞ্চলে পাঠিয়েছেন এবং আমরা উনার মাধ্যমে প্রভুতভাবে উউপকৃত হয়েছি।
পরিশেষে রাব্বুল আলামিনের দরবারে উনার আখিরাতের জীবনের সর্বোত্তম কল্যাণ ও কামিয়াবি কামনা করি।আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকেও দুনিয়া ও আখিরাতের জীবনে কামিয়াব করুক।
আ-মীন।


লেখক :
আবু নছর আতীক আহমদ।
উপাধ্যক্ষ (অবসরপ্রাপ্ত), চুনতী হাকিমিয়া কামিল (এম.এ) মাদ্রাসা।

আরও খবর