ইসরায়েলে নতুন করে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান কাছের মানুষকে আলিঙ্গন করা কেন জরুরি? একদিনে আরও ২৬ জনের করোনা শনাক্ত, মৃত্যু ১ পাল্টা হামলার মুখে যাত্রী ছাড়াই বিদেশে বিমান সরিয়ে নিচ্ছে ইসরায়েল জাতীয় নির্বাচনের তারিখ নিয়ে সমাঝোতা একটি ইতিবাচক দিক : আতিকুর রহমান জামায়াতের ১নং ওয়ার্ড কর্তৃক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত নাগেশ্বরীতে বাণিজ্যমেলা বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন রায়গঞ্জে মাছ ধরতে গিয়ে পানিতে ডুবে ভাই বোনের মর্মান্তিক মৃত্যু সাতক্ষীরা কালিগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতা মোজাহার হোসেন কান্টু গ্রেপ্তার শ্রীপুরে দফায় দফায় হামলা ও ভাঙচুর, অর্ধশতাধিক বাড়িঘর ও দোকানপাটে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ লালপুরে জামায়াতের ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত লালপুরে বিএনপির ঈদ পুনর্মিলনীতে জনতার ঢল! ঈশ্বরগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় ১ জন নিহত সাবেক সংরক্ষিত এমপি’র বাড়িতে যৌথবাহিনীর অভিযান: ইয়াবা-অস্ত্রসহ পুত্র আটক সুন্দরগঞ্জে জামায়াত কর্মী হত্যা মামলায় যুবলীগ নেতা আজম কারাগারে কালাইয়ে দুধর্ষ ডাকাতির ঘটনায় চিকন আলী নামে এক আন্তজেলা ডাকাত দলের সদস্য গ্রেপ্তার পাঁচ ব্যাংক মিলে হচ্ছে এক ব্যাংক, চাকরি হারাবেন না কর্মীরা নেতানিয়াহুর জন্য বিশ্ব আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে’ গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হককে অবরুদ্ধের প্রতিবাদে পীরগাছায় মশাল মিছিল সড়ক দুর্ঘটনায় লালপুরের যুবকের মৃত্যু

বিরল প্রতিভাধর আলেমে দ্বীন অধ্যাপক আল্লামা ফখরুদ্দীন রহ

বিরল প্রতিভাধর  আলেমে দ্বীন অধ্যাপক আল্লামা ফখরুদ্দীন রহ 


ড. মওলানা মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী।


চুনতি হাকিমিয়া আলিয়া মাদ্রাসায় ছাত্র জীবনে বন্ধুদের আড্ডায় ঘুরেফিরে একটি নাম বারবার আসত। তিনি ছিলেন বিরল প্রতিভার অধিকারী অসাধারণ মেধাবী অধ্যাপক আল্লামা  ফখর উদ্দীন (র)। চট্টগ্রামের চন্দনাইশে তার বাড়ি; অথচ মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের প্রতিটি পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। তার অসাধারণ প্রতিভার বিভিন্ন দিক নিয়ে আমরা গালগপ্প জুড়ে দিতাম।  আমার মনে সুপ্ত বাসনা ছিল কোনদিন যদি জ্ঞানের এই বরপুত্রের সাক্ষাত পাই তাকে মন ভরে দেখে নেব, সুযোগ হলে দুচারটি কথা বলব। কিছুদিন পর শুনলাম, তিনি মাদ্রাসা আলিয়া ঢাকার শিক্ষক পদে নিযুক্ত হয়েছেন। এটি ছিল তার বিরল প্রতিভার জাতীয় স্বীকৃতি। তখন তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধাবোধ ও আগ্রহের মাত্রা কয়েকগুণ বেড়ে যায়।১৯৭৫ সালে ফাযিল পরীক্ষার পরের বছর চুনতি মাদ্রাসায় কামিল হাদীস খোলা হয়। ফলে কামিল পড়ার জন্য বাধ্য হয়ে আমাদের অন্যত্র চলে যেতে হয়। সময়টি ছিল ১৯৭৪ এর দুর্ভিক্ষের পর রাজনৈতিক অস্থিরতার বছর। তখনকার মধ্যবিত্ত পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থার কথা এখন আন্দাজ করা যাবে না। আমার আব্বাজান চট্টগ্রাম শহরে একটি মোটরপার্টসের দোকানে ম্যানেজারের চাকরি করতেন। সেই সুবাদে আমি চট্টগ্রাম দারুল উলুম আলিয়া মাদ্রাসায় কামিল হাদীসে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাই। শৈশব থেকে অনেক বড় কিছু হওয়ার বাসনা মনে লালন করলেও ঢাকায় গিয়ে আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন দেখা তখন  আমাদের মতো পরিবরের ছেলেদের জন্য রীতিমত অপরাধ ছিল। ১৯৭৭ সালে দারুল উলুম আলিয়া মাদ্রাসা হতে কামিল হাদীস পাশ করার পরপর অর্থনৈতিক কারণে কর্মজীবনে প্রবেশ করতে বাধ্য হই। সাথে সংসার জীবনেও জড়িয়ে পড়ি। লোহাগাড়া ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসায় হেড মাওলানার পদে শিক্ষকতা আর দাম্পত্য জীবনের বাধ্যতা আমার উচ্চাভিলাষের সামনে সত্যিই বাধার পাহাড় হয়ে দাঁড়ায়। শেষ পর্যন্ত এক কঠিন জিহাদে অবতীর্ণ হই। লোহাগাড়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার

চাকরি ছেড়ে ১৯৭৮ সালে ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসায় কামিল ফিকাহতে ভর্তি হওয়ার দুর্লভ সুযোগ আসে । পিতামাতা ও জীবন সঙ্গীনির প্রতি দায়িত্ব পালনের কথা ভুলে গিয়ে এমন জিহাদ কত কঠিন ছিল তার বর্ণনা দেয়ার সুযোগ এখানে নেই। উদ্দেশ্য ছিল উচ্চতর লেখাপড়া করব, নিজেকে ভাবিষ্যতের জন্য তৈরি করব।। কিন্তু ঢাকায় গিয়ে অন্য পরিবেশে জড়িয়ে পড়ি। শৈশবকাল থেকে লালিত সাংগঠনিক চিন্তা চেতনা আমাকে টেনে নেয় সংগ্রামী জীবনের পথে। মাদ্রাসা আলিয়া ঢাকায় ভর্তির সময়েই চিন্তা ছিল স্বপ্নময় বিরল প্রতিভার অধিকারী অধ্যাপক আল্লামা  ফখর উদ্দীন সাহেবের যদি সাক্ষাত পাই, গ্রাম থেকে উঠে আসা ছাত্রটির জন্য মাদ্রাসার সামগ্রিক পরিবেশ অনুকুল হয়ে যাবে।।  কিন্তু জানতে পারি, কিছুদিন আগেই তিনি বদলী হয়ে গেছেন এবং সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা তার নতুন কর্মস্থল। কাজেই তাকে দেখা বা সাক্ষাত লাভের সুযোগ আপাতত নেই। নানা ঘটনা প্রবাহের ভেতর দিয়ে মাদ্রাসা-ই- আলিয়া ঢাকার ছাত্র হিসেবে বাংলাদেশ জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়ার কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী জেনারেল এর দায়িত্ব এসে পড়ল। তখন সমগ্র বাংলাদেশে মাদ্রাসা ছাত্রদের একক প্রতিনিধিত্বশীল এই সংগঠনটির জয়জয়কার। ছাত্র রাজনীতির দায়িত্ব আসার পর মনে হল শুধু মাদ্রাসা-ই-আলিয়া ঢাকা নয়; বরং গোটা বাংলাদেশের বৃহত্তর মাদ্রাসা অঙ্গন আমার উন্মুক্ত পাঠশালা। মাদ্রাসার চার দেয়লের বাইরে জাতীয় জীবনের বৃহত্তর অঙ্গনে দেশ, জাতি ও ইসলামকে নিয়ে চিন্তা গবেষণার বাধ্যবাধকতা আরোপিত হয় আমার উপর । তখন অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের ভেতর পরিবারের প্রতি চরম উদাসীনতার কথা চিন্তা করলে মনে হয় কোনো উন্মাদের পক্ষে এমনটি করা সম্ভব।  যাইহোক ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন এবং মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার নানা সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখার অদম্য প্রেরণা থেকে  শুরু হয় সারা দেশের মাদ্রাসা অঙ্গন চষে বেড়ানো আর মাদ্রাসা শিক্ষার অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যত নিয়ে লেখালেখি। ১৯৮৯ সালের কোনো এক সময়ে জমিয়তে তালাবার সাংগঠনিক সফরে সিলেট আলিয়া মাদ্রাসায় গমন করি। সেখানেই সাক্ষাত পেয়ে যাই এতদিনের স্বপ্নের প্রতিভা হযরত আল্লামা  ফখর উদ্দীন সাহেবের। সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা হোস্টেলের একটি বাসায় তিনি থাকেন। পূর্ব পরিচয় না থাকলেও ঢাকার ছাত্রনেতাকে তিনি দাওয়াত করেন তার বাসায়। মাদ্রাসা শিক্ষা নিয়ে আমার লেখালেখির সংবাদ সম্ভবত তিনি আগে থেকেই জানতেন। ফলে আলাপচারিতায় তার মনের আঙ্গিনায় প্রবেশ করতে আমাকে বেগ পেতে হয়নি। তার সাথে সেই সাক্ষাত ছিল স্মৃতিময় ও অন্তরঙ্গ। তিনি বেশ কিছু দিকনির্দেশনা দেন এবং  মাদ্রাসা শিক্ষা সম্পর্কিত কিছু লিখিত তথ্য আমার হাতে দিয়ে বলেন, এগুলো আপনার লেখালেখির কাজে আসবে। সেদিনের সাক্ষাতের স্মৃতি এবং তার অমায়িক ব্যবহার আমি জীবনেও ভুলতে পারব না। তার মমত্ব, চিন্তার প্রখরতা, আকিদা - বিশ্বাসের শুদ্ধতা ও অন্তরঙ্গ ব্যবহারের স্মৃতি আমাকে এখনো আপ্লুত করে। সাধারণত যারা জ্ঞান ও প্রতিভায় অগ্রণি তারা নিজেদেরকে আলাদা করে রাখেন। সাধারণ লোকেরা তাদের সাথে সহজে মেশার সুযোগ পায় না। কিন্তু শায়খুল হাদীস আল্লামা  ফখর উদ্দীন (র) ছিলেন তার ব্যতিক্রম। তার গভীর পান্ডিত্য কোনো সময় তার গায়ে অহংকারের ছোঁয়া লাগাতে পারেনি। ইলম নিয়ে গর্ব বা বাড়াবাড়ি করেছেন কিংবা কারো সাথে তর্কে জড়িয়েছেন বলে আমার জানা নেই। সরকারী চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি চুনতি হাকিমিয়া আলিয়া মাদ্রাসায় কামিল ক্লাসে শায়খুল হাদীস পদে শিক্ষকতা করেন।  এটিও ছিল তার অসাধারণ জ্ঞান গরিমার প্রতি আলেম সমজের স্বীকৃতি ও ভালোবাসার নিদর্শন। দীর্ঘদিন ঢাকায় ও বিদেশে থাকায় তার সাহচর্য লাভের তেমন সুযোগ না হলেও তাকে সবসময় মনে শ্রদ্ধার আসনে রেখেছি। তার ভালোবাসায় আমার মনপ্রাণ এখনো আপ্লুত। আল্লাহ পাক তাকে জান্নাতুল ফেরদাউসে উচ্চ মাকাম দান করুন। 


লেখক :

ড. মওলানা মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী।

ইসলামী চিন্তাবিদ ও গবেষক।

আরও খবর