প্রফেসর আল্লামা ফখরুদ্দীন (রাহ) অত্যন্ত উঁচু মাপের একজন বিদগ্ধ ইসলামিক স্কলার ছিলেন। তাঁর সম্মানিত পিতা একজন বড় মুফতী ছিলেন। ওনার পরিবারের নামানুসারে মুফতী বাড়ী কিংবা মাওলানা মঞ্জিল রাখা হয়।
তিনি দারুল উলুম আলীয়া মাদরাসা,চট্টগ্রামে অধ্যয়ন করেছেন শায়খুল হাদীস আল্লামা মতিউর রহমান নিজামী রহঃ সহ অনেক বড় বড় আলেমদের নিকট। সেখান থেকে চলে গেলেন ঢাকা আলীয়া মাদরাসায়।
সেখানে গিয়ে আল্লামা মুফতী আমীমুল ইহসান (রহ) ও আল্লামা কাশগরী (রহঃ) এর নজর কাড়েন তাঁর ইলমী বিচক্ষণতায়। যার ফলে উস্তাজদের প্রিয় হয়ে গেলেন। আমাদের পাঠ দানের ফাঁকে বলেছিলেন যে, তিনি আল্লামা মুফতী আমীমুল ইহসান মুজাদ্দেদী রহঃ এর নিজস্ব রুমে সিহাহ্ সিত্তা রেওয়াতান - দেরাইয়াতান পড়েছেন ক্লাসের পড়ার বাইরে ও। তিনি বলেছিলেন সবচেয়ে কঠিন কিতাব"সুল্লাম-মুসাল্লাম"سلم العلوم، مسلم الثبوت" কিতাদ্বয় পড়েছেন। এবং পাঠদান করেছেন।দীর্ঘ দিন ঢাকা আলীয়ায় শায়খুল হাদীস হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পর তিনি সিলেট আলীয়া মাদরাসায় বদলী হন । সেখানে বেশ কিছু সময়ে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করার পর পরবর্তীতে অধ্যক্ষ পদেই অবসর গ্রহণ করেন। সিলেট থেকে অবসর হওয়ার পর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া মাদরাসায় শায়খুল হাদীস হিসেবে অফার পাওয়ার পরও তিনি চুনতী হাকিমীয়া আলীয়া মাদরাসায় শায়খুল হাদিস হিসেবে যোগদান করেছিলেন যেহেতু উনার শশুরালয় এবং চুনতির সাথে হুজুরের একটা আত্নার সম্পর্ক ছিল।
হুজুরকে চুনতি মাদরাসার শায়খুল হাদীস হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার জন্য মাদরাসা কমিটিকে সুপারিশ করেছিলেন প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ শাহ সূফী আল্লামা আবদুল হাই নিজামী হাফিঃ (সাবেক শায়খুল হাদীস চুনতি মাদরাসা)।
আল্লামা ফখরুদ্দীন (রাহঃ) আমরণ অত্র মাদরাসার শায়খুল হাদীস হিসেবে যথাযথ দায়িত্ব পালন করে গিয়েছিলেন। একই সাথে চুনতীর ১৯ দিন ব্যাপী সিরাতুন্নবী (সা) মাহফিলের উদ্ভোধক ছিলেন। হুজুর অত্যন্ত সুন্দর ও কঠিন বিষয়কেও সহজ করে পাঠদান করতে পঠু ছিলেন। রাবীদের জীবন চরিত বর্ণনা করতে গিয়ে খুলে খুলে আলোচনা করতেন তিনি। ফিক্বহী মাসাঈল গুলা পরিষ্কারর করে বর্ণনা করতেন তিনি। হুজুর রিওয়াইয়াহ্ ও দিরাইয়াহ্ হাদীস বর্ণনা করতেন। হুজুর প্রতিদিন আসরের পর রুমে বসে দরুদ শরীফ পাঠ করতেন।
হুজুর প্রায় বলতেন" خير الاعمال ادومها وان قل" সর্বোত্তম আমল হল অল্প পরিমাণে হলেও যেটা নিয়মিত করা হয়। প্রায় দেখতাম হুজুর হাদীস অধ্যয়নে নিমগ্ন। একটু রসিক ছিলেন। পড়ার মাঝখানে হঠাৎ এমন জায়েয কথা বলতেন যেটা শুনে সবাই হেসে উঠত। আমার মনে হত হুজুর এটা এজন্যই করতেন যেন দীর্ঘক্ষণ ছাত্রদের জমাটবাঁধা ব্রেইন সার্ফ হয়ে যায়। হুজুর আরেকজনের নিকট থেকে কুরআন শুনাকে খুব বেশী পছন্দ করতেন। আমি নামাজে তাদওয়ীর পড়াতাম। হাদরের চেয়ে আরেকটু বাড়ীয়ে টেনে টেনে থেমে থেমে তিলাওয়াত করতাম। হুজুর বলতেন এভাবেই রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাজে তিলাওয়াত করতেন। হুজুরের শিষ্য ও ছাত্রদের মধ্যে অন্যতম যাদের জানি অনারবী হয়েও আরবীদেরকে ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন কিং সাউদ ইউনিভার্সিটিতে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে গোটা বিশ্ব বিদ্যালয়ে রেকর্ড পরিমাণ নাম্বার পেয়ে কিং আবদুল আজিজ পুরস্কার লাভ করে দুই দুইবার ধন্য হয়েছেন বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার আল্লামা ড. খোন্দকার আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহঃ, ড. আবুল কালাম আজাদ এবং ড. আবদুস সালাম আজাদী প্রমুখ।
চুনতি মাদরাসায় হুজুরের খাদিম হিসেবে ছিলাম আমি অধম এক বৎসর ছয় মাস পর্যন্ত। হুজুরের অমায়িক ব্যবহার সত্যিই অতুলনীয়। পরিশেষে মহান রবের দরবাহে প্রার্থনা এই যে তিনি যাতে স্বীয় হাবীবের হাদীসের এ জাহাজ কে জান্নাতুল ফেরদৌসের সর্বোচ্চ মক্বামে সমাসীন করেন। আমীন।
লেখক:
ইসলামী মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও আরবী প্রভাষক,লালিয়ারহাট হোসাইনীয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা, ফতেয়াবাদ, চট্টগ্রাম।