“হাদীস বিশারদ হিসেবে আল্লামা ফখরুদ্দীন (র) ছিলেন এক উজ্জল নক্ষত্র”
কাজী মাওলানা ফজলুর রহমান
আমি যখন ঢাকা আলীয়া মাদ্রাসায় ১৯৮৯ইং সালে ভর্তি হই। তখন তাঁর আন্তরিক সহযোগীতা আমাকে সফলতার দ্বার প্রান্তে নিয়ে যায়। ঢাকা আলীয়া মাদরাসায় মুহাদ্দিস হিসেবে যেই খেদমত তিনি আনজাম দিয়েছেন তা সত্যিই বিরল। আশেকে রাসূল হিসেবে হাদিসে রাসূলের যে খেদমত পালন করেছেন, আমরা তাঁর কাছে ঋনী। এই ঋণ পরিশোধ করার মতো যোগ্যতা আমার নিকট নাই। তবে আমি তার জন্য দোয়া করি। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের কেন্দ্র শরীয়ত ও তরীকত। এ আকীদা কুরআন ও সুন্নাহ থেকে উত্তরাবিকার সুত্রে লাভ করা। এই আকীদা প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি সারাটা জীবন সংগ্রাম করেছেন। মানুষ মরণশীল বটে কিন্তু কীর্তি তাকে অমর করে রাখে। কুরআন ও সুন্নাহর মাধ্যমে আত্মশুদ্ধির পথ তিনি আমাদের প্রদর্শন করতেন। ওহীর মাধ্যমে প্রাপ্ত জ্ঞানের সংরক্ষন ও তার অনুসরণ ব্যতীত মানব জাতী ও মানব সভ্যতার সংরক্ষণ সম্ভব নয়। এবং যতক্ষন পর্যন্ত আল্লাহ ও রাসূলেল প্রতি মহাব্বত অর্জিত হবে না। ততক্ষণ পর্যন্ত কামিয়াব ও মুক্তি সম্ভব নয়। মারেকতে ইলাহীর মুহাব্বতের সাগরে তিনি ডুবন্ত এক লুকানো মালিক ছিলেন। নুরে নবুওয়তের ফয়েজ, বরকত দ্বারা তিনি হাদিসে রাসূলের দারস দিতেন। উনার এই খেতমত মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কবুল করে নিয়েছেন। তার খোদা ভীতি ও তাকওয়া উচ্চ স্তরের ছিল। এখলাছ ছাড়া না তাওহীদ গ্রহনীয় হয়, না ঈমান ও আমল। আমরা তার সম্মান ও মূল্য এবং প্রকৃত মাহাত্ব্য ও শ্রেষ্ঠত্ব তাঁর আমলের মাধ্যমে অনুধাবন করেছি। সত্যিকার অর্থে তিনি এমন একজন শায়খুল হাদীস ছিলেন। যার মাধ্যমে উম্মতের অনেক উপকার সাধিত হয়েছে। শরীয়তের চার উসুল দিয়ে উম্মতের কল্যাণ সাধনের জন্য তিনি আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। আল্লাহ তা’য়ালা প্রিয় নবী (সঃ) কে কিতাব ও হেকমত প্রদান করেন। আর হেকমত হলো ওহীর মাধ্যমে প্রদত্ত অতিরিক্ত প্রয়োগিক জ্ঞান যা হাদিস নামে সংকলিত হয়েছে। কুরআনকে বুঝার জন্য হাদীসে রাসূলের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। একজন মুসলমানকে হাদীস থেকে বিচ্ছিন্ন করার অর্থই হলো তাকে রাসূল (সঃ) এর বাস্তব জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা। হাদীসে রাসূল (সঃ) হলো কুরআন এর তাফসীর বা ব্যাখ্যা। হাদীসের উপর নির্ভর না করলে কুরআন মানা ও সম্ভব নয়। কুরআন এ করীমে সকল কিছুর বর্ণনা রয়েছে। কিন্তু তা সবই শুধু মাত্র মুলনীতি বা প্রাথমিক নির্দেণা রূপে ব্যাখ্যা ছাড়া সেগুলো পালন করা অবম্ভব। আর ব্যাখ্যা হলো হাদীস শরীফ এ জন্য হাদীস বাদ দিলে আর কোন ভাবেই কুরআন মানা বা ইসলাম পালন করা যায় না। তাই আল্লামা ফখরুদ্দীন (রহ.) কুরআন ও হাদীসের উপর গবেষণা করতেন। কত বড় আশেকে রাসূল হলেই এমন সদকায়ে জারীয়ার কাজ করতে পারেন। প্রিয় নবীজীর জীবনী, পরিচয় বিশ্বস্ততার উপর তিনি গভীর জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। আল্লামা ফখরুদ্দীন (রহ) প্রকৃত রূহানী শক্তির অধিকারী ছিলেন। তিনি ওয়রাসাতুল আম্বিয়া হিসেবে নুরে নবুওয়াতের ফয়েজ বরকত ও তাওজ্জুহ লাভ করেছিলেন। আল্লাহ ও রাসূলের শান-মান ইজ্জত রক্ষা করে চলতে পারলেই রূহানী শক্তি বৃদ্ধি পাবেই। যারা শরীয়ত গর্হিত কাজে লিপ্ত যেমন মদ, জোয়া, জেনা-ব্যভিচার বিলাসিতা, ইন্দ্রিয় পুজা, নাচ-গানের আসরে মগ্ন, অশ্লীলতায় লিপ্ত জুলুম -নির্যাতন, অপরের আধিকার হরণ, বে-ইনসাফী ও অবৈধ উপার্জনে লিপ্ত তারাই রাসূলের দুশমন ও রাসূলের বিরোধিতায় মাতোয়ারা। আমরা আল্লাহ ও রাসূলের ভালবাসার দাবীদার কিন্তু আমল করি ভালবাসার বিপক্ষে। ভালবাসার দাবী হলো যাকে ভালবাসি তার সন্তুষ্টি অর্জনের পক্ষেই কাজ করা। আফসোসের বিষয় যে, আমরা দুশমনদের পক্ষে কাজ করি। আল্লামা ফখরুদ্দীন (রহ) এই ব্যাপারে খুবই সজাগ ছিলেন। এমনকি তিনি এই সব ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক করতেন। তিনি সত্য ভাষী, সহিষ্ণু, ধৈর্যশীল এবং অসাধারণ ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন ছিলেন। তিনি রাসূল পাক (সাঃ) এর প্রতি গভীর ভালবাসা এবং অন্যান্য হক্কানী আলেম ওলামা ও পীর মাশায়েখদের প্রতি ভক্তি এবং শ্রদ্ধা তাঁর জীবনের উন্নত ভূষন। ইসলাম ও শরীয়তের সুরক্ষায় এবং রাসূল পাক (সাঃ) এর মান সম্মান সমুন্নতা রাখার ব্যাপারে আল্লামা ফখর উদ্দীন (রহঃ) সব সময় নির্ভীক ভূমিকা পালন করেন।তিনি স্পষ্ট বাদী ছিলেন। তার প্রত্যেকটি কথা শিক্ষানীয় ও গঠন মুলক ছিল। ইখলাস ও বিশুদ্ধ নিয়ত নিয়েই তিনি সমস্ত কাজ আনজাম দিতেন।
লেখক :
প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান,কাজী এফ, রহমান ফাউন্ডেশন,
ধনিয়ালা পাড়া, ডবলমুরিং, চট্টগ্রাম।
সাবেক প্রধান মুহাদ্দিস, দারুল উলুম কামিল মাদ্রাসা,চট্টগ্রাম।
সাবেক প্রধান মুহাদ্দিস, রাঙ্গীখালী আলীয়া মাদ্রাসা, টেকনাফ, কক্সবাজার ।
সাবেক প্রধান মুহাদ্দিস, রাঙ্গুনিয়া আলম শাহ পাড়া মাদ্রাসা, চট্টগ্রাম।
সাবেক প্রধান মুহাদ্দিস, বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল মাদ্রাসা, চট্টগ্রাম।
৫ ঘন্টা ১৫ মিনিট আগে
৫ ঘন্টা ১৯ মিনিট আগে
৫ ঘন্টা ২১ মিনিট আগে
৫ ঘন্টা ২৩ মিনিট আগে
৫ ঘন্টা ২৭ মিনিট আগে
৫ ঘন্টা ৫০ মিনিট আগে
৫ ঘন্টা ৫২ মিনিট আগে
৭ ঘন্টা ২১ মিনিট আগে