ঢাকায় বজ্রবৃষ্টির পূর্বাভাস গুম প্রতিরোধে এক মাসের মধ্যে আইন, গঠিত হচ্ছে শক্তিশালী কমিশন সাতক্ষীরায় জলবায়ু অধিপরামর্শ ফোরামের সভা তাণ্ডবে পাইরেসির হানা ট্রাক মালিককে হয়রানির অভিযোগে পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে মোংলায় বাস যাত্রীদের থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান জয়পুরহাটের পাঁচবিবি থেকে মুল্যবান কষ্টিপাথরের বিষ্ণু মূর্তিসহ ০২ জন গ্রেপ্তার নড়িয়ায় উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বাল্যবিবাহ বন্ধ শেরপুরের শ্রীবরদীতে সুদের টাকা না পেয়ে গাছে বেঁধে ব্যবসায়ীকে নির্যাতন জয়পুরহাটে সড়ক দুর্ঘটনায় ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত-১, শিশুসহ আহত ৫ নোয়াখালীতে এসিড নিক্ষেপের ভয় দেখায় জোরপূর্বক দর্শন গ্রেপ্তার ১ সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক কক্ষে আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক মাসিক সভা অনুষ্ঠিত ইসরায়েলে নতুন করে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান কাছের মানুষকে আলিঙ্গন করা কেন জরুরি? একদিনে আরও ২৬ জনের করোনা শনাক্ত, মৃত্যু ১ পাল্টা হামলার মুখে যাত্রী ছাড়াই বিদেশে বিমান সরিয়ে নিচ্ছে ইসরায়েল জাতীয় নির্বাচনের তারিখ নিয়ে সমাঝোতা একটি ইতিবাচক দিক : আতিকুর রহমান জামায়াতের ১নং ওয়ার্ড কর্তৃক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত নাগেশ্বরীতে বাণিজ্যমেলা বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন রায়গঞ্জে মাছ ধরতে গিয়ে পানিতে ডুবে ভাই বোনের মর্মান্তিক মৃত্যু

ইলা মিত্রের ৯৯ তম জন্ম বার্ষিকী পালিত

ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলনের কিংবদন্তি ও নাচোলের রাণীমাখ্যাত বিপ্লবী কমরেড ইলা মিত্রের ৯৯তম জন্মবার্ষিকী পালিত হয়েছে। শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) বিকাল ৪টার দিকে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিপ্লবী ইলা মিত্র জন্মবার্ষিকী উদযাপন পরিষদ এ উপলক্ষে ‘আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।


অনুষ্ঠানের শুরুতে সম্মিলিত শিল্পী সমাজের অংশগ্রহণে জাগরণের গান, আদালতে ইলা মিত্রের জবানবন্দি পাঠ ও কবিতা পাঠ করা হয়। এরপর বিপ্লবী ইলা মিত্র জন্মবার্ষিকী উদযাপন পরিষদের আহবায়ক ফিরোজ খান নুর এর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব সুজন বিপ্লবের সঞ্চালনায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ভোলা সরকারি কলেজের প্রভাষক ও লেখক রাশিব রহমান, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির জেলা সাধারণ সম্পাদক স্বপন বাগচী, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ জেলা সাধারণ সম্পাদক শাহিদুল এনাম পল্লব, উদীচী শৈলকুপা শাখার সাধারণ সম্পাদক আলমগীর অরণ্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা কমরেড শ্যামল রায় সহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বক্তব্য রাখেন। বক্তারা ইলা মিত্রের বর্ণাঢ্য রাজনতৈকি জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, সংগ্রামী কৃষক নেতা ইলা মিত্রের শৈশব থেকে বেড়ে ওঠা ঝিনাইদহের শৈলকুপার বাগুটিয়া রায়পাড়া গ্রামে। গ্রামের বাড়িটি দীর্ঘদিন ধরে বেদখল হয়ে আছে। একটি মহল ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে সেটিকে বৈধ বলে দখল করে বসবাস করছেন। তারা বলেন, ইলা মিত্রের স্মৃতি সংরক্ষণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি তেমন কোনও উদ্যোগ। এমনকি তার জন্ম অথবা মৃত্যু দিবসে তাকে নিয়ে তেমন কোনও অনুষ্ঠানের আয়োজনও করা হয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে পৈত্রিক সম্পদ সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ ও বাড়ি দর্শনীয় করে তোলা উচিত।


যা থেকে নতুন প্রজন্ম ইলা মিত্র ও তেভাগা আন্দোলন সম্পর্কে জানতে পারে। এছাড়া ইলা মিত্র স্মরণে রাষ্ট্রীয়ভাবে কর্মসূচি আয়োজনের দাবিও জানান তারা। উল্লেখ্য, সংগ্রামী কৃষক নেতা ইলা মিত্র ১৯২৫ সালের ১৮ অক্টোবর জন্ম গ্রহণ করেন। শৈশব থেকে তার বেড়ে ওঠা ঝিনাইদহের শৈলকূপার বাগুটিয়া রায়পাড়া গ্রামে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ছাত্রজীবনেই ইলা মিত্র কমিউনিস্ট আদর্শের সংস্পর্শে এসেছিলেন। নাচোলের রাণী ইলা মিত্রর বাবা নগেন্দ্রনাথ সেন ও মা মনোরমা সেন দু’জনের বাড়িই ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার বাগুটিয়া গ্রামে। বাবার চাকরির সুবাদে ইলা সেনের জন্ম হয় কলকাতায়। তবে বিবাহসূত্রে ১৯৪৫ সালে তিনি চলে আসেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের রামচন্দ্রপুরে। সে সময় জমিদারি উচ্ছেদ, জোতদারী, শোষণ ও খাদ্য আন্দোলনে ভূমিকা রাখেন। ইলা মিত্রের বাবা নগেন্দ্রনাথ সেন ছিলেন অবিভক্ত বাংলার ডেপুটি অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেল। ১৯৪৫ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের জমিদারপুত্র দেশকর্মী কমিউনিস্ট রমেন্দ্র মিত্রের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। স্বামীর দেখানো পথেই তিনি যোগ দেন বৃটিশবিরোধী আন্দোলনে। কৃষকদের উৎপাদিত ফসলের এক-তৃতীয়াংশ আদায় করার অন্দোলনে (তেভাগা আন্দোলন) নেতৃত্ব দেন তিনি। হয়ে উঠেন সবার রাণীমা। ১৯৪৬ থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত তেভাগা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন ইলা মিত্র ও রমেন মিত্র।১৯৫০ সালের ৭ জানুয়ারি সাঁওতাল বেশ ধারণ করে ভারতে পালাবার সময় ইলা মিত্রকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তান পুলিশ। কারাগারে তার ওপর চলে পাশবিক নির্যাতন। এরপরও আদালতে নির্ভীক চিত্তে ঐতিহাসিক জবানবন্দি দেন এ কিংবদন্তি। কৃষকদের সঙ্গে সংঘর্ষে ৪ জন পুলিশ নিহত হওয়ায় ইলা মিত্রসহ ২৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকার ইলা মিত্রকে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে কলকাতা যাবার অনুমতি দেয়। এরপর আর পূর্ব বাংলায় ফিরে আসতে পারেননি ইলা মিত্র। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের পক্ষে তিনি ভারতে ও বিশ্ব পরিসরে জনমত সংগঠিত করতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৩ অক্টোবর ২০০২ সালে ৭৭ বছর বয়সে ইলা মিত্রের দেহাবসান ঘটে। এদিকে ব্রিটিশবিরোধী তেভাগা আন্দোলনের কিংবদন্তি ও মহান মুক্তিযুদ্ধের সুহৃদ ইলা মিত্রের শৈলকূপার বাগুটিয়া গ্রামের বাড়িটি দীর্ঘদিন ধরে বেদখল হয়ে আছে। একটি মহল ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে সেটিকে বৈধ বলে দখল করে বসবাস করছেন। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, দোতলা বাড়িটির অধিকাংশ স্থানে ছোটবড় ফাটল ধরেছে, গজিয়েছে পরগাছা, কোনো কোনো স্থান ধ্বসে পড়েছে অনেক আগেই। এখন ওই বাড়িতে বসবাস করা মৃত কিয়ামউদ্দিনের সন্তানদের দাবি, তাদের বাবা ইলা মিত্রের উত্তরাধিকারদের কাছ থেকে বাড়িটি কিনে নিয়েছেন। তারা বৈধভাবেই বাড়িটিতে বসবাস করছেন। তাদের স্বপক্ষে সব দলিলাদি দেখাতেও তারা প্রস্তুত। তাদের ভাষ্য তারা টাকা দিয়ে বাড়ি কিনেছেন বসবাসের জন্য। সরকার যদি সেটি অধিগ্রহণ করতে চায় তাহলে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও তাদের সম্মানজনক বসবাসের ব্যবস্থা না করলে তারা ভিটেমাটি হারাবেন। কিয়ামউদ্দিনের মেজ ছেলে জাহাঙ্গীর আলম জানান, তারা যেন কোনো অবিচার ও অন্যায়ের শিকার না হন, সেদিকে সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনকে লক্ষ রাখতে হবে। ইলা মিত্রের পৈতৃক বাড়ি সংরক্ষণ আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ও ইলা মিত্র জন্মবার্ষিকী উদযাপন পরিষদের সদস্য-সচিব সুজন বিপ্লব বলেন, ‘দীর্ঘদিন বসবাসরতদের অন্যত্র পুনর্বাসন ও দখলমুক্ত করে সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ না থাকায় বাড়িটির সঙ্গে কালের সাক্ষী কৃষক আন্দোলনের ইতিহাস ও স্মারক স্থানটিও বিস্মৃত হয়ে যাচ্ছে। অতীতে বাড়িটি সংরক্ষণের জন্য স্মারকলিপি, মানববন্ধন, মিছিল, সমাবেশ ও আন্দোলন কর্মসূচি করেছি। ইলা মিত্রের বাড়ি সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় যা করার আমরা করব।’ শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্নিগ্ধা দাস জানান, ‘ইলা মিত্রের বাড়ি সংরক্ষণের বিষয়টি নিয়ে আমার সঙ্গে কেউ কথা বলেনি। বিষয়টি কি অবস্থায় আছে জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’