ভাজাপোড়া কমিয়ে ইফতারে বিভিন্ন ধরনের ফল রাখতে পছন্দ করেন মুসল্লিরা। তরমুজ, আপেল, পেয়ারা, কলা, আনারস, খেজুর, ডাবের পানি, বাঙ্গিসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফল ভিন্ন মাত্রা যোগ করে ইফতারে। তবে ফলের বাজারের যে অবস্থা তাতে এবারের রোজায় ইফতারে সাধারণ মানুষকে ফলের আইটেম রাখতে হয়তো দ্বিতীয়বার ভাবতে হবে। তেমন বার্তাই দিচ্ছে ফলের ঊর্ধ্বমুখী দাম।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ইফতারের শুরুটা যে খেজুর দিয়ে করবেন, তার প্রতিটির দাম কম-বেশি ১০ টাকা। এরপর শরবতের বদলে ডাব খেলে লাগবে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। ইফতারের মেনুতে একটি আপেল আর একটি কলা রাখলে যোগ করতে হবে আরও ৫০ টাকা।
ফলের দাম এখন এমনই। বাজারে ইরাকের জাহেদি খেজুর (বাংলা খেজুর) ছাড়া ভালো মানের খেজুর ৪০০ টাকা কেজির নিচে কেনা যাচ্ছে না। আমিরাতের নাগাল, দাবাস ও লুলু খেজুরের দাম ৬০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। সৌদি আরবের আজওয়া, আম্বার কিংবা জর্ডানের মরিয়ম খেজুর কিনতে হলে গুনতে হবে হাজার টাকার ওপরে। কেজিতে যে পরিমাণ খেজুর হয় তাতে প্রতিটির দাম পড়ে ৮ থেকে ১৬ টাকা পর্যন্ত।
অন্যদিকে আপেলের কেজি ৩০০ টাকায় ঠেকেছে। যেসব আপেল মাসখানেক আগেও ২২০ টাকা ছিল সেগুলো এখন ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে আমদানি করা গোল্ডেন আপেল ৩৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ফুজি আপেল ৩০০ ও গালা আপেল ৩৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
শুধু খেজুর, ডাব বা আপেল নয়, বাজারে বেড়েছে সব ধরনের ফলের দাম। সোমবার (১৩ মার্চ) রাজধানীর বিভিন্ন ফলের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, একে তো বাড়তি দাম, এরপরও প্রতিদিন ৫-১০ টাকা করে বাড়ছে। রমজান পর্যন্ত এ দাম কোথায় গিয়ে ঠেকে তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিক্রেতারা।
জানতে চাইলে বাদামতলীর কুমিল্লা ফল ভান্ডারের জিয়াদুল হক বলেন, ‘রমজান আসতে না আসতেই ফলের যে দাম উঠেছে তাতে ইফতারের সময় সাধারণ মানুষ ফল খেতে পারবেন না।’
রামপুরা বাজারে ফল কিনতে আসা ক্রেতা সেমন্তি হক বলেন, ‘যে দাম, তাতে সব ধরনের ফল নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের জন্য এখন ফল নয়। যাদের ইনকাম হিসাব ছাড়া তারাই শুধু খেতে পারবেন।’
ওই বাজারের ফল বিক্রেতাদের দাবি, দাম বাড়ায় তারাও বিপদে পড়েছেন। বিক্রি কমে গেছে। সালাম নামের এক বিক্রেতা বলেন, ‘গত সপ্তাহে স্ট্রবেরি ৫০০ টাকা কেজি ছিল। আজ পাইকারি কিনেছি ৬০০ টাকা কেজি। কালো আঙুর ও মাল্টার দামও তিনদিনের ব্যবধানে ২০ থেকে ৫০ টাকা বাড়তি। কিন্তু আমরা এভাবে বাড়িয়ে বিক্রি করতে গেলে রেগুলার কাস্টমারদের তোপের মুখে পড়তে হয়। অনেকে না কিনে ফিরে যান।’
তিনি বলেন, ‘আগে যে ক্রেতা দুই কেজি ফল নিতেন, তারা এখন এক কেজি নেন। কেউ কেউ একটা আপেল, একটা মাল্টা কিনেও বাড়ি যান। ফলের এত দাম আমি আগে কখনো দেখিনি।
আগেও বেড়েছে, সেটা দু-এক পদ, অন্যগুলো কম থাকে। কিন্তু এবার একসঙ্গে পেয়ারা ছাড়া সব ফলের দাম বাড়ছে।’
বিভিন্ন ফলের দোকান ঘুরে দেখা যায়, শুধু পেয়ারা ৬০-৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি কেজি নাশপাতি ৩৫০ টাকা, পাকা পেপে ১০০, মাল্টা ২২৪- ২৫০, আঙুর ২৪০-৩০০, লাল আঙুর ৪৫০-৫০০, ডালিম ৪৫০-৪৮০ ও কমলা (ভারতীয়) ২৪০-৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে বাজারে কলার দামও এখন বেশি। প্রতি ডজন সবরি কলা বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা। চাম্পা কলা ৬০-৮০ টাকা। এছাড়া সাগর কলা আকারভেদে ৮০-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে পর্যাপ্ত গ্রীষ্মের ফল তরমুজ দেখা গেছে। বিক্রি হচ্ছে আকারভেদে ৫০-৫৫ টাকা কেজি দরে। খালেক নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, তরমুজ জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে উঠেছে। এখন বাজার ছেয়ে গেছে। তবে সামনে রোজা হওয়ার কারণে দাম অনেক বেশি।
এছাড়া দেশি ফলের বাজারে প্রতি পিস বেল ৫০-৭০ টাকা, চালতা ৪০-৫০ ও আনারস ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া কামরাঙ্গা ও সফেদা ৮০ টাকা এবং আমড়া ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
ফলমূলের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুরটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি শামসুল হক বলেন, ‘চলতি বছর ফলের আমদানি বেশ কম হয়েছে। কারণ বিশ্ববাজারের সব দেশে ফলের দাম প্রায় দ্বিগুণ। পাশাপাশি রমজানের প্রস্তুতি হিসেবে যখন আমরা ফল আমদানির এলসি খুলেছি (নভেম্বর-জানুয়ারি) সেসময় দেশে ডলারের রেট অনেক বেশি ছিল।’
শামসুল হক বলেন, ‘দাম ও খরচ বেশি হওয়ায় লোকসানের শঙ্কায় অনেকেই এ বছর সীমিত আমদানি করেছে। আবার বাজারে অন্য নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় মানুষের খরচ অনেক বেড়েছে, সেক্ষেত্রে ফলের বিক্রিও কমে যাওয়ার শঙ্কা ছিল। সেটাই হয়েছে, এখন বিক্রি প্রায় ২০-২৫ শতাংশ কম।’
৪ মিনিট আগে
২৫ মিনিট আগে
১৮ ঘন্টা ৪ মিনিট আগে
১৮ ঘন্টা ৯ মিনিট আগে
১৮ ঘন্টা ৩২ মিনিট আগে
২০ ঘন্টা ৩ মিনিট আগে
২০ ঘন্টা ৪৩ মিনিট আগে