|
Date: 2023-07-06 05:56:40 |
নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় সাড়ে সাত লাখ লোকের বসবাস। দ্বীপবাসীর স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে জেলা শহরের ওছখালিতে স্থাপন করা হয় ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
এখানে আধুনিক সুযোগ সুবিধা না থাকায় অনেক রোগীকে জেলা সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সড়ক পথ না থাকায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে রোগীদের জেলা সদর হাসপাতালে নেয়ার একমাত্র মাধ্যম হলো নৌ-পথ। রোগীদের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে ২০১৯ সালে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে হাতিয়ার জন্য একটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স দেয়া হয়। কিন্তু গত বছরের অক্টোবরে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি। এরপর থেকে দীর্ঘসময় কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও সঠিক তদারকির অভাবে এখনও বিকল হয়ে মেঘনা পাড়ে পড়ে আছে নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি। ফলে প্রতিনিয়ত রোগী নিয়ে বিপাকে পড়েছেন সেবা প্রত্যাশীরা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সুত্রে জানা যায়, উন্নত চিকিৎসার জন্য ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রতিমাসে গড়ে ৬০ থেকে ৭০জন রোগীকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সরকারি এ হিসাবের বাইরে প্রায় সময় নিজেদের উদ্যোগে উন্নত চিকিৎসার জন্য জেলা সদরে যায় আরও অন্তত অর্ধশত রোগী। নলচিরা ঘাট হয়ে চেয়ারম্যান ঘাট দিয়ে দ্বীপ থেকে জেলা শহরে যেতে হয়। যা সাধারণ মানুষের জন্য অনেকটা কষ্টকর হয়ে পড়ে। তারমধ্যে স্পীডবোট, ট্রলারে অতিরিক্ত যাত্রীদের সঙ্গে গাদাগাদি করে নদী পথ পার হতে হয় রোগীদের। এতে যাত্রী হওয়া পর্যন্ত দীর্ঘসময় ঘাটে অপেক্ষা করে জেলা সদরে যেতে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছে রোগীরা।
স্থানীয়রা জানান, গত বছরের ২৪ অক্টোবর হাতিয়ার নলচিরা ঘাটে ছিলো নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি। বিকেলে দ্বীপে আঘাতহানে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। এসময় মেঘনা নদীর তীরে থাকা অ্যাম্বুলেন্সটি ঝড়ের আঘাতে গাছের সাথে লেগে ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর দীর্ঘদিন তদারকি না হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত অ্যাম্বুলেন্স থেকে প্রয়োজনীয় মূল্যবান যন্ত্রাংশ খুলে নিয়ে যায় লোকজন। যার ফলে বর্তমানে পুরোটাই বিকল অবস্থায় পড়ে আছে অ্যাম্বুলেন্সটি। দ্বীপের রোগীদের কথা চিন্তা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি মেরামত করে পুনঃরায় চালু করার দাবি জানান স্থানীয়রা।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বলেন, সিত্রাং এর সিগনাল পড়ার পরপর প্রতিটি নৌযানকে তাদের মালিকগণ নিরাপদ স্থানে নিয়ে গেলেও নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি নলচিরা ঘাটের পাশে পড়ে ছিলো। জোয়ার ও প্রচন্ড বাতাসের আঘাতে অ্যাম্বুলেন্সটি নদীর তীরে থাকা নারিকেল গাছের সাথে ধাক্কা লেগে ভেঙে যায়। তারপর থেকে ওই গাছের সাথে এখনও পর্যন্ত পড়ে থেকে বিকল হয়ে যায় অ্যাম্বুলেন্সটি। ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর পর যদি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এটি মেরামতের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন তাহলে তখনই এটি সচল করা সম্ভব হতো।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি মহিউদ্দিন মুহিন বলেন, দেশের উত্তাল নদীগুলোর মধ্যে মেঘনা অন্যতম। জোয়ার ও জোয়ারের পরবর্তী সময়ে প্রায়ই উত্তাল থাকে নদীটি। তাই ক্ষতিগ্রস্ত নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি সচল করার পাশাপাশি এ নদীর জন্য একটি সী-অ্যাম্বুলেন্স দেয়ার দাবি সেবা প্রত্যাশীদের।
নৌ-অ্যাম্বুলেন্স চালক আশ্রাফ আলী বলেন, ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা থাকা অ্যাম্বুলেন্সটি কমিউনিটি বেস্ট হেলথ কেয়ার থেকে বুঝে নেয় উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। কিন্তু তখন অ্যাম্বুলেন্সটির জন্য কোনো চালক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। রোগীদের কাছ থেকে নেয়া নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার একটি অংশ দিয়ে আমাকে চালক হিসেবে রাখা হয়। ২০২২ সালের ২০ অক্টোবর আউটসোসিং থেকে আমাকে নিয়োগ দিলেও এখনও পর্যন্ত কোন বেতন দেওয়া হয়নি, এদিকে নৌ-অ্যাম্বুলেন্স বিকল থাকায় বেকার সময় পার করতে হচ্ছে আমাকে।
জানতে চাইলে হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সৌমেন সাহা বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে অ্যাম্বুলেন্সটি মেরামত করে রোগীদের ব্যবহারের উপযোগি করা হবে। এ সংক্রান্ত একটি বরাদ্দ মন্ত্রণালয় থেকে পাস হয়েছে বলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে আমাকে নিশ্চিত করা হয়েছে।
© Deshchitro 2024