আশাশুনি উপজেলার বড়দল ইউনিয়নের ল²ীখোলা কমিউনিটি ক্লিনিক খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ও জ্বরাজীর্ণ ভবনে পরিচালনা করা হচ্ছে। ফলে সেবাদানকারী ও সেবা গ্রহিতারা ঝুঁকির মধ্যে থেকে ক্লিনিক পরিচালনা ও সেবা গ্রহন করে আসছে ফলশ্রæতিতে যে কোন সময় ঘটতে পারে দূর্ঘটনা।
ক্লিনিকের অবস্থা এতটাই শোচনীয় যে, বৃষ্টি হলেই ছাঁদ চুইয়ে পানি পড়ে, বিদ্যুৎ সংযোগ নেই, সুপেয় পানি ও শৌচাগারের ব্যবস্থা নেই। প্রাণের ঝুকি নিয়ে ঘরের মধ্যে না বসেও ঝুকি থাকলেও বাধ্য হয়ে সিএইচসিপি সেলিনা আক্তার বারান্দার বসেন। ভবনের বাইরের অংশের প্লাস্টার খসে পড়ছে। মরিচা পড়ে নষ্ট হয়ে যাওয়া গ্রীল থেকে জানালার একাংশ খুলে রাখা হয়েছে। জানালার উপরের লোহার বীম নষ্ট হয়ে যাওয়ায় প্লাস্টার খসে পড়ছে। সাপের আনাগোনা থাকায় সাপের খোলস বাতাসে উড়তে দেখা যায়।
সিএইচসিপি সেলিনা আক্তার জানান, ২০০১ সালে নির্মাণের পর থেকেই আমি এখানে কর্মরত আছি। ভবনের ছাঁদ চুইয়ে পানি পড়ে। প্লাস্টার খসে খসে পড়ায় একা একা এখানে থাকতে ভয় লাগে। বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় গরমে সেবা নিতে আসা রোগিদের সাথে আমাকেও কষ্টের মধ্যে থাকতে হয়। বাথরুমটি অকেজো থাকায় জরুরী প্রয়োজনে পাশের বাড়িতে যেতে হয়। সুপেয় পানির কোন ব্যবস্থা না থাকায় জরুরী ঔষধ সেবন করা যায়না। ক্লিনিকে ১০০ ওয়াটের ৬টি সোলার প্যানেল ছিল। ২০১১ সালে এর মধ্যে ২ টি চুরি হয়ে যায়। বিষয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে জানিয়ে বাকি ৪টি সোলার প্যানেলের একটি ক্লিনিকে, একটি আমাদের তৎকালিন স্টাফ তাপস সরদার, গোপাল কুমার ও একটি আমার হেফাজতে রেখেছি। বৃষ্টি হলেই পাশের গোসাই সানার ঘেরের বেড়িবাঁধ ছাপিয়ে ক্লিনিক চত্বরের সামনের অংশ পানিতে ডুবে যায়। ক্লিনিকের আওতাভুক্ত সুরেরাবাদ, গাতীরমহল, বাইনতলা, মুরারীকাটি, হেতাইলবুনিয়া, বামনডাঙ্গা ও জেলপাতুয়া গ্রাম, সকল গ্রামে সুপেয় পানির অভাব থাকায় এখানে পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। তাই আমাশয়, চর্মরোগ, ডায়রিয়া ও বাচ্চাদের সর্দিকাশির ঔষধ যা বরাদ্দ পাওয়া যায় তা সংকুলান হয়না। বরাদ্দের থেকে একটু বেশি দিলে ভালো হয়।
ক্লিনিকে সেবা নিতে আসা পঞ্চানন সরদার, দেলোয়ার হোসেন, গোসাই সানা সহ স্থানীয়রা জানান, ক্লিনিকের অবস্থা তা দেখে ঢুকতে ভয় করে। এখানে পানি নেই, বিদ্যুৎ নেই, বাথরুম নেই, ছাদ দিয়ে পানি পড়ে, দরজা জানালায় মরিচা ধরে অনিরাপদ হয়ে গেছে, ঘরের পাশে পানি থাকায় ঘরের ভেতরে বিষাক্ত সাপ এসে ওঠে। কেমন একটা বেহাল অবস্থা। ভবনটির যে অবস্থা তাতে সংস্কার না করে পরিত্যক্ত ঘোষনা করে নতুন ভবন নির্মান করা জরুরী বলে তারা মনে করেন।
বড়দল ইউপি চেয়ারম্যান জগদীশ চন্দ্র সানা জানান, ক্লিনিকটা আমাদের জন্য অতিব জরুরী। কিন্তু এর ভৌতিক অবকাঠামো একেবারে ভেঙে পড়েছে। আমি বিষয়টি উপজেলা পরিষদের মিটিংয়ে কথা বলেছি। পানি ও মাটি ভরাটের সমস্যাটি আমি অতিদ্রæত সমাধানের চেষ্টা করব। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. মিজানুল হক জানান, ভবনটির বেহাল অবস্থার কথা শোনার পর থেকে নতুন ভবনের জন্য সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক এমপি স্যারকে অবহিত করেছি। তিনি খুব আগ্রহের সাথে বিষয়টি দেখছেন। আশাকরি খুব দ্রæত সমাধান হবে। আর অন্যান্য বিষয়গুলো সমাধানের জন্য আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024