কামরুল হাসান কাজল, স্টাফ রিপোর্টারঃ গতকাল বিশ্ব আদিবাসী দিবসটি পালন করা হয়েছে । দেশের উন্নয়নে তাদের অবদান ও অর্জনকে স্বীকৃতি দিতেই জাতিসংঘ ৯ আগস্টকে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। প্রতিবছর দিবসটি পালন করার জন্য একটি প্রতিপাদ্য বিষয় বেছে নেয়া হয়। এ বছরে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উদযাপন করা হবে। ১৯৮২ সালের ৯ আগস্ট জেনেভায় জাতিসংঘের বৈঠকের পর দিবসটি নিয়ে কাজ শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ নির্ধারণ করে প্রতি বছরের ৯ আগস্টই হবে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস।দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশে বসবাসরত প্রায় ৩০ লাখ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী প্রগতিশীল আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালন করবে।তবে নির্দিষ্ট অঞ্চলে বসবাস, ইতিহাস, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তথা ভাষা, সাহিত্য, সংগীত, নৃত্য, কারুশিল্প, ধর্ম, আচার-অনুষ্ঠান, রীতিনীতি, প্রথা, সংস্কার এর সকল বৈশিষ্ট বিদ্যমান থাকা সত্বেও হবিগঞ্জ জেলার চা বাগনের ৮৫টি সম্প্রদায়ের দেড়লাখ লোক ক্ষদ্র নৃ-গোষ্ঠীর তালিকাভুক্ত হতে পারেনি। ফলে সরকার কর্তৃক প্রাপ্ত অনেক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত তারা।


অথচ তাদের সাথেই বসবাসকারী অন্য ৯টি সম্প্রদায় ঠিকই ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর তালিকায় থেকে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে। এ নিয়ে বঞ্চিতদেও মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। তালিকায় নাম অন্তর্ভূক্তির জন্য তারা প্রতিনিয়ত আন্দোলন করে যাচ্ছেন। কিন্তু তোন প্রতিকার পাচ্ছেন না।দারিদ্র, অশিক্ষা, অসচেতনতা ও নেতৃত্বের অভাবের জন্যই মূলত দিনের পর দিন তারা এই বঞ্চনার শিকার হয়েছেন। দেশের আদিবাসি ফোরামের যারা নেতৃত্বে রয়েছেন তাদেরও সু-দৃষ্টি নেই ওই সকল জনগোষ্ঠির প্রতি। পাশাপাশি হবিগঞ্জ জেলায় সরকারিভাবে আদিবাসি কোন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে না উঠায় বিলুপ্ত হতে চলেছে ওই সকল ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি।২০১০ সালে সরকার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইন প্রণয়ন করে। সেখানে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী হিসাবে ২৭টি জাতির কথা বলা হলেও হবিগঞ্জের ৮৫টি সম্প্রদায়ের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি। পাশাপাশি নেত্রকোনা, রাঙ্গামাটি, মৌলভীবাজার, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাজশাহীতে সরকারীভাবে আদিবাসী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠাকরা হলেও হবিগঞ্জে কোন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নেই।হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায় সবচেয়ে বেশী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বসবাস। জেলার ২৪টি চা বাগানে ৮৯টি সম্প্রদায়ের ১ লাখ ৬০ হাজার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জনগন রয়েছেন। এর মাঝে কেবলমাত্র সাওতাল, মুন্ডা ও ওরাং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছ্।ে একই সমাজে বসবাস এবং একই কাজে জড়িত থাকার পরও শুধু মাত্র ৩টি সম্প্রদায় বিশেষ সুযোগ সুবিধা পায়।হবিগঞ্জের বাগানগুলোতে কালেন্দি, ভূমিজ, কর্মকার, বাগতি, মুদি, কানু, তাড়িত, পানতাতি, কাহার, বারাইক, রাউতিয়া ও কৈরিসহ বহু জাতি রয়েছে। তারা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী হিসাবে স্বীকৃতি পায়নি।ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর তালিকায় ৪৮টা অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। চা শ্রমিকরা সেখানে নেই। তবে তারা যে সুবিধা পায় চা শ্রমিকরা যাতে সেই সুবিধা পায় তা নিশ্চিত করতে হবে।। ভারতে আদার বেকুয়ার্ড ক্লাস (ওবিসি) হিসাবে সেই ধরনের সুবিধা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য চালু রয়েছে।হবিগঞ্জ আদীবাসী ফোরামের নেতৃবৃন্দরা বলেন, বাগানের সকল চা শ্রমিকরাই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী হওয়ার কথা। কিন্তু সাবইকে এই তালিকায় রাখা হয়নি। এ ব্যাপারে চা শ্রমিকদেরকে বোঝাতে চাইলেও তারা বুঝতে চায় না। তারা চা শ্রমিক জনগোষ্ঠী হিসাবে আলাদা কোটা পেতে চায়। আমারা সকল চা শ্রমিকই আদিবাসী। কিন্তু বেশিরভাগ চা শ্রমিকরাই সরকারি স্বীকৃতি পায়নি। সরকার যদি স্বীকৃতি না দেয় তা হলে অনেক ক্ষুদ্র জাতি তার ভাষা ও সংস্কৃতি হারিয়ে ফেলবে।


প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024