|
Date: 2023-08-27 12:32:01 |
পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের হিসাবরক্ষক মোঃ জাকির হোসেন'র বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, ব্যাপক অনিয়ম, ঘুষ, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও বিভিন্নভাবে হয়রানিসহ শিক্ষক-কর্মচারীদের সাথে অশালীন ও ঔদ্বত্যপূর্ণ আচরণের অভিযোগ উঠেছে। চাহিদা মতো ঘুষের টাকা দিতে না পারলে শিক্ষকদের কপালে জোটে গালিগালাজ, দুর্ব্যবহার, অশালীন মন্তব্য ও হুমকি। হিসাবরক্ষক জাকির হোসেন শিক্ষকদের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে জানান ভুক্তভোগী শিক্ষকরা ।
এ ব্যাপারে উপজেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভুক্তভোগী শিক্ষকরা সম্মিলিত ভাবে গত ১৭ আগস্ট বরিশাল অঞ্চলের উপ-পরিচালক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযুক্ত জাকির হোসেন উপজেলার মির্জাগঞ্জ ইউনিয়নের পিঁপড়াখালী গ্রামের মোঃ আশ্রাব আলী বেপারির ছেলে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত জাকির হোসেন ২০১৮ সনের জানুয়ারি মাসে মির্জাগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে অফিস সহকারি (কাম ডাটা এন্ট্রি অপারেটর) পদে যোগদান করে এবং পরবর্তীতে হিসাবরক্ষক পদে পদোন্নতি পায়। এরপর থেকেই স্থানীয় প্রভাব ও তার আপন ফুপাতো ভাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা মোঃ মিলন হাওলাদারের ক্ষমতার অপব্যবহার করে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে শিক্ষক-কর্মচারি নিয়োগে ঘুষ বানিজ্য, সরকারি অর্থ আত্মসাৎ ও ব্যাপক অনিয়ম সহ নানাবিধ দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে। যার ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই ব্যাপক অর্থ-সম্পদের মালিক হয়ে যান। উপজেলার সুবিদখালী সরকারি ডিগ্রি কলেজ সংলগ্নে ৬ তলা ভিত বিশিষ্ট বিলাসবহুল দোতলা অট্রালিকা রয়েছে। বাসায় রয়েছে এসি। এছাড়াও উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় শহরে তার নামে বেনামে একাধিক বাড়ি,গাড়ি,জমি,প্লট ও ফ্লাট রয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংক একাউন্টে রয়েছে নামে বেনামে কোটি কোটি টাকা। তার জিপিএফ ফান্ডে রয়েছে ৩১০০০০০/=( একত্রিশ লক্ষ) টাকা।
আরও জানা যায়, সম্প্রতি PBGSI প্রকল্পের স্কিমের SMAG এর অনুদান পাঁচ লক্ষ টাকার আবেদন গ্রহন বাবদ প্রতি প্রতিষ্ঠান থেকে ৫০হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নিয়েছেন তিনি। বিনামূল্যে সরকারি বই বিতরণের জন্য পরিবহন খরচ বাবদ সরকারি বরাদ্ধের টাকা প্রতিষ্ঠানকে না দিয়ে ৭ বছর যাবত সে আত্মসাৎ করেছে। নতুন কারিকুলামের উপর বিষয়ভিত্তিক অনেক শিক্ষককে প্রশিক্ষনে নাম না দিয়ে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর নামে ও বেনামে প্রশিক্ষনের সরকারি বরাদ্দের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে। শিক্ষক প্রশিক্ষনের ভাতা থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের শিক্ষার্থীদের সমন্বিত উপবৃত্তির ডাটা এন্ট্রির হার্ডকপি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে জমা দেয়ার সময় শিক্ষার্থী প্রতি ৩০ টাকা হারে ঘুষ দিতে হয়। শিক্ষার্থীর ইউনিক আইডির ডাটা এন্ট্রির পারিশ্রমিক বাবদ প্রতি প্রতিষ্ঠানের জন্য সরকারি বরাদ্দের লাখ লাখ টাকা প্রতিষ্ঠানকে না দিয়ে সুকৌশলে আত্মসাৎ করেছেন তিনি। ম্যানেজিং কমিটি গঠনের সময় প্রিজাইডিং অফিসারের সম্মানি ও অফিস খরচ বাবদ জাকিরকে ২৫ হাজার টাকা থেকে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়। নতুন এমপিওভুক্তির আবেদন, বিএড স্কেল ও উচ্চতর স্কেলসহ যে কোন সংশোধনী কিংবা নাম কর্তনের আবেদন সেন্ড বা ফরোয়ার্ড করতে তাকে ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়। চাহিদা মতো ঘুষ না দিলে বিনা অযুহাতে আবেদন ব্যাক টু এপ্লিক্যান্ট কিংবা রিজেক্ট পর্যন্ত করে থাকে। শিক্ষক - কর্মচারী নিয়োগের সময় নিয়োগ পরীক্ষার সময় ও তারিখ নির্ধারণের ক্ষেত্রে জাকিরের সাথে আগেভাগে ঘুষ টাকার চুক্তি ও লেনদেন করতে হয়। প্রধান বা সহঃ প্রধান শিক্ষক নিয়োগে ৫ লক্ষ টাকা থেকে ১০লক্ষ টাকা এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে ৩ লক্ষ থেকে ৫ লক্ষ টাকা ঘুষ দিতে হয়। কখনো কখনো জাকির প্রতিষ্ঠান প্রধান ও সভাপতিকে অবৈধ চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে নিজের আত্মীয় বা ঠিক করা প্রার্থীকে চাকরি দিতে বাধ্য করে। এমনই ঘটনা ঘটেছে উপজেলার কাঁঠালতলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে।সম্প্রতি সেখানে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের আপন চাচাতো ভাইকে নিজ বাড়ি কুড়িগ্রাম থেকে এনে ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারি পদে নিয়োগ দিয়েছেন। এছাড়াও উপজেলার ইসলামাবাদ মোহাম্মাদিয়া দাখিল মাদ্রাসা ও পূর্ব মির্জাগঞ্জ এস এম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে অভিযুক্ত জাকির তার আপন দুই ভাইকে ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী পদে চাকরি দিয়েছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রেজাউল কবীর এর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহোযোগিতায় অভিযুক্ত হিসাবরক্ষক জাকির লাগামহীন ভাবে এসব ঘুষ, দুর্নীতি ও অনৈতিক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে বক্তব্যের জন্য অভিযুক্ত জাকির হোসেনের মুঠোফোন (০১৭১৯-৬৩৩৭৩২) নাম্বারে একাধিকবার কল করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ রেজাউল কবীর অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ায় নিজের অক্ষমতার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।
পটুয়াখালী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, সরজমিনে উপস্থিত হয়ে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।
এব্যাপারে PBGSI স্কিম পরিচালক প্রফেসর চিত্ত রঞ্জন দেবনাথ বলেন, অভিযোগের বিষয় তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, বরিশাল অঞ্চলের উপ-পরিচালক মোঃ আনোয়ার হোসেন জানান, অভিযোগের ব্যাপারে সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য জেলা শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
© Deshchitro 2024