কক্সবাজারের একটি কটেজে এক তরুণীকে দলবেঁধে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলার প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। 


বুধবার কক্সবাজার শহরের মোহাজেরপাড়া থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে সদর থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম জানান। 


গ্রেপ্তার সোলেমান শামীম (২৩) ওই পাড়ার বাসিন্দা। 


মামলার এজাহারনামীয় অপর দুই আসামি হলেন: হারবদল ও অটোরিকশা চালক মো. রশিদ।  

 

মামলার নথি ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঢাকা থেকে কক্সবাজার এসেছিলেন তিন তরুণীসহ পাঁচ জন। 


গত রোববার সকালে কক্সবাজারের কলাতলীর হোটেল-মোটেল জোনের মেরিন প্লাজায় ওঠেন তারা। 


পরদিন সোমবার রাত ১১টার দিকে সেখান থেকে দুই তরুণী বের হয়ে হেঁটে সুগন্ধা সড়কের পাশে রেস্তোরাঁয় খেতে যান। 


মামলায় বলা হয়, পরে হোটেলে ফেরার সময় একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় আসা পাঁচ যুবক দুই তরুণীর গতিরোধ করেন। 


তারা মেয়ে দুটির হাত-মুখ চেপে ধরে অ*স্ত্রের মুখে শহরের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের বিপরীতে রাজিউন কটেজ নামে একটি হোটেলের আলাদা দুটি কক্ষে নিয়ে যায়।  


সেখানে দলবেঁধে ধর্ষণের শিকার হওয়ার অভিযোগ করেন এক তরুণী। 


বুধবার সকালে ১৯ বছর বয়সি মেয়েটি বাদী হয়ে তিন জনের নামোল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা দুজনকে আসামি করে কক্সবাজার সদর থানায় মামলা করেছেন বলে ওসি মো. রফিকুল ইসলাম জানান।  


মামলার এজাহারে আরও বলা হয়, রাজিউন কটেজে প্রবেশের পরই দুই তরুণীকে আলাদা কক্ষে বন্দি করা হয়। বাদী অপর কক্ষের পরিস্থিতি জানতে না পারলেও তার ওপরে ভয়াবহ নির্যাতন চালানোর অভিযোগ করেন। নির্যাতনের এক পর্যায়ে জ্ঞান হারান তিনি। 


পরদিন মঙ্গলবার সকালে তাদের দুজনকে একটি বাহনে (টমটম) করে নিয়ে যাওয়া হয় বাস টার্মিনাল এলাকায়। ওখানে ঢাকাগামী একটি বাসে তাদের তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু পথে একজন মারাত্মক অসুস্থতাবোধ করার কারণে বাস থেকে নেমে চিকিৎসার জন্য রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান।  


ওই হাসপাতালে তরুণীকে চিকিৎসা দেন নুরুল হুদা মজুমদার নামে এক চিকিৎসক। 


বুধবার দুপুরে তিনি জানান, যে মেয়েটি মঙ্গলবার সকালে চিকিৎসার জন্য আসেন তার মাথা ফাটা ও র*ক্তা*ক্ত ছিল। একইসঙ্গে যৌন নির্যাতনের বিষয়টিও ছিল। 


চিকিৎসক নুরুল হুদা বলেন, বিস্তারিত জানতে চাওয়া হলে দলবেঁধে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন জানিয়ে পুলিশের সহযোগিতা চায় ওই তরুণী। পরে রামু থানায় বিষয়টি জানিয়ে মেয়েটিকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।


এদিকে কক্সবাজার সদর থানার পুলিশ তাদের এখানে গিয়েছিলেন বলেন জানান, রাজিউন কটেজের সহকারী ব্যবস্থাপক নুরুল আজিম।  


তার দাবি, সোমবার রাতে কটেজে দায়িত্বরত ছিলেন আরেক সহকারী ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সোহেল।  


মঙ্গলবার সকাল ৯টায় তিনি হোটেলে দায়িত্ব পালন করতে আসেন। ওই সময় পর্যন্ত তিনি ঘটনার ব্যাপারে কিছুই জানতেন না। 


তিনি বলেন, “মঙ্গলবার বিকাল ৫টার দিকে পুলিশের একটি দল কটেজে এসে সোহেলকে আটক করে নিয়ে যায়। এ সময় ঘটনার ব্যাপারে আমি জানতে পারি।”  


তবে কারা, কিভাবে ঘটনা ঘটিয়েছে; সে ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে দাবি কটেজটির এ সহকারী ব্যবস্থাপকের।  


নুরুল আজিম আরও বলেন, “পুলিশ কটেজ থেকে অতিথি নিবন্ধন খাতা, সিসিটিভি ফুটেজ এবং ঘটনাস্থল হিসেবে চিহ্নিত ১১২ নম্বর কক্ষ থেকে কিছু আলামত সংগ্রহ করে নিয়ে যায়।”  


আটক কটেজ কর্মকর্তা সোহেলকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে বুধবার বিকালে কক্সবাজার সদর থানার ওসি বলেন, ভুক্তভোগীকে সাথে নিয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলের সিসিটিভির ফুটেজ দেখে তিন জনকে শনাক্ত করেছে। যাদের একজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। 


তরুণীর মামলাটি কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে ওসি মো. রফিকুল ইসলাম জানান।  


এ ছাড়া মামলার এজাহারে নাম উল্লেখ করা দুই আসামিসহ অজ্ঞাতনামা আসামিদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানান, কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার শেহেরিন আলম। 


ঢাকা থেকে আসা ওই তরুণীর অপর সঙ্গীদের সঙ্গে আলাপ হয়েছে কিনা জানাতে চাইলে শেহেরিন আলম বলেন, “এদের সাথে আলাপের জন্য ভিকটিমের সাথে আলোচনা হচ্ছে।”


তিনি আরও বলেন, এ অপরাধে রাজিউন কটেজ কর্তৃপক্ষ জড়িত কিনা, তারা আইন মেনে কক্ষ ভাড়া দিয়েছে কিনা তাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024