বাংলাদেশে নির্বাচনের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা শুধু এককভাবে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব নয়; সরকার, গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক দলকেও ভূমিকা রাখতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র কোনো দলকে সমর্থন করে না। তবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়।


আজ রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে ‘মিট দ্য অ্যাম্বাসেডর’ অনুষ্ঠানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এসব কথা বলেন। বাংলাদেশি বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) ও জার্মান গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ফ্রেডরিখ এবার্ট স্টিফটাং এ আয়োজন করে।


এক প্রশ্নের জবাবে পিটার হাস বলেন, নির্বাচন শুধু একটি দিনের ঘটনা নয়। বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচন স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছভাবে হবে কি না, তা নির্ভর করছে বেশ কয়েকটি বিষয়ের ওপরে। কারণ, রাজনৈতিক দলগুলো স্বাধীনভাবে তাদের কর্মসূচি পালন করতে পারছে কি না, গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজ তাদের মতপ্রকাশের সুযোগ পাচ্ছে কি না, তার ওপর নির্ভর করছে এটি।


মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে যে রাজনৈতিক সহিংসতা চলছে, তা একটি সঠিক নির্বাচনের জন্য সহায়ক নয়। নির্বাচনের আগে ও পরের ঘটনাও একটি অবাধ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের অংশ, তাই বাংলাদেশের বর্তমান সহিংসতার ঘটনা যুক্তরাষ্ট্র সরকার ও বিশ্ব সম্প্রদায় নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।


গতকালের ‘মিট দ্য অ্যাম্বাসেডর’ অনুষ্ঠানে র‌্যাবের বর্তমান ও সাবেক ৭ কর্মকর্তার নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেন, জবাবদিহির আওতায় না আসা পর্যন্ত র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এবং এর সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। নিষেধাজ্ঞাগুলো শাস্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যে নয়, বরং আচরণ পরিবর্তন ও তাদের জবাবদিহির আওতায় আনার জন্য।



গত বছরের ১০ ডিসেম্বর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‌্যাব এবং বাহিনীর সাবেক ও বর্তমান সাতজন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। র‌্যাবের সাবেক ডিজি হিসেবে পুলিশের বিদায়ী আইজিপি বেনজীর আহমেদও নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়েন। আবার র‌্যাবের বিদায়ী ডিজি হিসেবে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের ওপরও একই নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আবদুল্লাহ আল–মামুন নতুন আইজিপির দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন।


গতকাল পিটার হাস বলেন, ‘গত বছরের ডিসেম্বরে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এটা খুব ভালো সংকেত। আমরা আশা করছি, র‌্যাবের আচরণের পরিবর্তন হবে।’


এই নিষেধাজ্ঞার কারণে দুই দেশের সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়েনি বলেও মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের দূত। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের কোনো টানাপড়েন নেই। দুই দেশের সম্পর্কের আবহ চমৎকার। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা সহযোগিতার লক্ষ্যে বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। তারা কাজ করছে।’ গুমের বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে হাস বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র গুমের অভিযোগগুলোর স্বাধীন তদন্ত প্রক্রিয়া দেখতে চায়।’


এক প্রশ্নের উত্তরে পিটার হাস বলেন, ‘ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে (আইপিএস) বাংলাদেশের যোগ দেয়া-না দেয়াটা কোনো বিষয় নয়। কারণ এটা একটা নীতি। এটা বাংলাদেশ কীভাবে নেয়, সেটাই দেখার বিষয়। আবার বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে (বিআরআই) যোগ দেয়াটাও বাংলাদেশের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশ কোন জোটে যোগ দেবে, সেটা তাদের বিষয়।’


চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ- বিআরআই প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দূত বলেন, ‘বিআরআইয়ে যোগ দেয়াটাও বাংলাদেশের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশ কোন জোটে যোগ দেবে, সেটা তাদের বিষয়।’


সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে দেশের বিশিষ্ট নাগরিক, সাবেক রাষ্ট্রদূত, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, সাবেক সামরিক কর্মকর্তা, শিক্ষক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024