|
Date: 2024-04-07 03:01:10 |
বাংলাদেশে নিম্ন আয়ের মানুষেরা সবচেয়ে বেশি ধূমপান করে থাকেন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা যায়, সিগারেট ইন্ডাস্ট্রির ৮০ শতাংশই দখল করে আছে এই নিম্নস্তরের সিগারেট। এই স্তরের সিগারেটের ভোক্তারা সাধারণত নিম্ন আয়ের মানুষ। এরাই আবার বিড়ির ভোক্তা।
এছাড়া গুল, জর্দা ও সাদা পাতার মতো ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্যের ভোক্তাও এই শ্রেণীর মানুষ। তামাক বিরোধী বিভিন্ন সংগঠনের দাবি অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর তামাকের কারণে ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ অকালে মারা যায়। প্রায় ১৫ লাখের বেশি মানুষ বিভিন্ন অসুস্থতায় ভোগে এবং পরোক্ষ ধূমপানের কারণে ৬১ হাজার শিশু নানা রোগের শিকার হয়। আর এখানেও বেশিরভাগ নিম্ন আয়ের মানুষ। তাই নিম্ন স্তরের সিগারেটের দাম বাড়িয়ে তামাক নিয়ন্ত্রণে বড় ভূমিকা রাখা সম্ভব বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। দেশি-বিদেশি নানা গবেষনায় দেখা যায়, সিগারেটের দাম বাড়ানো হলে নিম্ন আয়ের মানুষের ধূমপানের হার কমে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোর ইলিয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যোবাকোনোমিক্সের এক গবেষণায় থেকে জানা যায়, ‘সিগারেটের দাম ১০ শতাংশ বাড়ানো হলে, নিম্ন আয়ের মানুষের ধূমপান ৯ শতাংশ কমে আসে।’ প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে তামাক মুক্ত দেশ গড়তে প্রতি বছর বাজেটে তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার কমানো এবং রাজস্ব আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে তামাক ও তামাকজাত পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে থাকে সরকার। উল্লেখ্য, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিম্নস্তরের প্রতি ১০ শলাকা প্যাকেট সিগারেটের দাম ৩৫ টাকা নির্ধারণ করে। এরপর গত ২০২২-২০২৩ অর্থবছর পর্যন্ত চার অর্থবছরে এই স্তরের সিগারেটের দাম মাত্র ৫ টাকা বেড়ে ৪০ টাকা হয়। অর্থ্যাৎ বছরে গড়ে বেড়েছে মাত্র ১.২৫ টাকা। গত ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে নিম্নস্তরের সিগারেটের দাম ৫ টাকা বেড়ে হয়েছে ৪৫ টাকা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা যায় নিম্নস্তরের সিগারেটের দাম ৫ বাড়ানোয় রাজস্ব আয়ে ভালো প্রভাব পড়েছে। আশা করা হচ্ছে এবার এই খাত থেকে প্রায় ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে যা প্রায় ২৫০০ কোটি টাকার মতো। অর্থনীতিবিদগণ এই মূল্য নির্ধারনকে সময়োপযোগী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আসছে বাজেটে এই স্তরের সিগারেটের দাম অন্তত ১৫ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি)সহ বিভিন্ন সংগঠন। সংশ্লিষ্ট অর্থনীতিবিদরা মনে করেন নিম্নস্তরের দাম মুদ্রাস্ফীতির সাথে সমন্বয় করে বাড়ানো হলে সরকারের আভ্যন্তরীণ রাজস্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি চলমান রিজার্ভ সংকট উত্তরনে ভূমিকা রাখবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি অধ্যাপক ড. তারেক হোসাইন চৌধুরী বলেন, “ধূমপানের ক্ষতি হ্রাস করতে সব ধরনের সিগারেটের দাম ভোক্তার ক্রয় সীমার বাইরে নেয়া জরুরি। বিশেষ করে দেশের নিম্নআয়ের মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে ও ধূমপায়ীদের ধূমপানে নিরুৎসাহিত করতে অবশ্যই নিম্নস্তরের সিগারেটের দাম বাড়ানো উচিত। এছাড়াও নিম্নস্তরের সিগারেটের দাম প্যাকেট প্রতি ১২-১৫ টাকা বাড়ালে সরকারের রাজস্ব বাড়বে অন্তত সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা।" তিনি আরো বলেন, “ আভ্যন্তরীন রাজস্ব বৃদ্ধির ফলে দেশের বৈদেশিক ঋণ কমবে। ফলে রিজার্ভ সংকট কাটাতে ও চলমান মন্দা মোকাবেলায় বড় ভূমিকা রাখবে।
তাই দেশের আভ্যন্তরীণ রাজস্বের জাল বিস্তৃত করতে হবে।” নিম্নস্তরের সিগারেটের মূল্য ৪৫ টাকা (প্রতি ১০ শলাকার প্যাকেট) থেকে অন্তত ১৫ টাকা বাড়ানো গেলে তা সামগ্রিক অভ্যন্তরীণ রাজস্বের পক্ষে ইতিবাচক হবে। এতে একদিকে যেমন নিম্ন আয়ের মানুষ ধূমপান ছাড়তে উৎসাহী হবে তেমনি দেশের রাজস্বও বাড়বে।
© Deshchitro 2024