সিলেটে গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি কিছুটা কমেছে। তবে ভারত থেকে নেমে আসা উজানের ঢল ও টানা বৃষ্টিতে সিলেটে বন্যা ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। সিলেট ও সুনামগঞ্জের আরও বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে বন্যাকবলিত হয়েছেন প্রায় সাড়ে ১২ লাখ মানুষ। পানিবন্দি পৌনে সাত লাখ মানুষ। এর মধ্যে প্রতিনিয়ত প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা।


সিলেট জেলার সিলেট মহানগর ও ১৩টি উপজেলায় মোট পানিবন্দি ছয় লাখ ৭৫ হাজারের বেশি মানুষ এবং সুনামগঞ্জে পানিবন্দি পাঁচ লাখ ৬০ হাজার মানুষ। এর মধ্যে সিলেটে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন ১৭ হাজার ৮২৫ জন এবং সুনামগঞ্জে ১২ হাজার ৫০০ জন।


সিলেটের সীমান্তবর্তী পাঁচ উপজেলা গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ ও জকিগঞ্জের পাশাপাশি বন্যা ছড়িয়ে পড়েছে সদর, দক্ষিণ সুরমা, বিশ্বনাথ, ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলায়। এসব উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।


সিলেট জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, গতকাল মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত নগরের ২১টি ওয়ার্ড ও জেলার ১ হাজার ৩২৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এতে ৬ লাখ ৭৫ হাজার ৯৩৭ জন মানুষ বন্যা আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে নগরের অর্ধলক্ষ লোক পানিবন্দি।


জেলা ও নগর মিলিয়ে ৬২৭টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে নগরে ৮০টি। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ১৭ হাজার ২৮৫ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।


সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড এর তথ্য অনুযায়ী, আজ সকাল ৯টায় সুরমা নদীর পানি সিলেটের কানাইঘাট উপজেলায় বিপদসীমার ৯১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা গতকাল সন্ধ্যায় ১২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।


একই নদীর পানি সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায় বিপদসীমার ১৪৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা গতকাল সন্ধ্যায় ১৫৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। 


তবে সুরমা নদীর পানি উজানে কিছুটা কমলেও এখনো সিলেট নগর, সুনামগঞ্জ শহর ও সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের বিপদসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার, ৪০ সেন্টিমিটার ও ১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।


এ ছাড়াও কুশিয়ারা নদী সিলেটের জকিগঞ্জের অমলশীদে বিপদসীমার ৪৬ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জে ৯২ সেন্টিমিটার, শেরপুরে ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গোয়াইন নদী গোয়াইনঘাটে বিপদসীমার নয় সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।


ইতোমধ্যে নগরের শাহজালাল উপশহর, যতরপুর, মেন্দিবাগ, শিবগঞ্জ, রায়নগর, সোবহানীঘাট, কালিঘাট, কামালগড়, মাছিমপুর, তালতলা, জামতলা, কাজিরবাজার, মাদিনা মার্কেট, আখালিয়া, মেজরটিলা ও দক্ষিণ সুরমার লাউয়াই, বরইকান্দি, আলমপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় অনেকের বাসাবাড়িতে গলা পর্যন্ত পানি উঠেছে। নিচু এলাকাগুলোর কলোনি বা বাসা-বাড়ি প্রায় পুরোটাই তলিয়ে গেছে বন্যার পানিতে। এতে চরম বিপাকে এসব এলাকার মানুষ।

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024