লাখাইয়ের পুর্ববুল্লা গোপিনাথ, লিবিয়ায় অপহরণের শিকার হয়ে ২বছর পর দেশে ফিরলেন, শুনালেন নির্যাতনের ভয়ংকর কাহিনী। লাখাই উপজেলার ৬ নংবুল্লা ইউপির ৮ নং ওয়ার্ডের পূর্ব বুল্লা গঙ্গানগর এর বাসিন্দা গোপেশ মোদকের ছেলে গুপিনাথ মোদক(২৭) লিবিয়ায় অপহরণের পর বেঁচে ফেরার কোনো সম্ভাবনাই ছিল না গোপিনাথের, অনিশ্চিত যাত্রা থেকে ফিরে আসায় উল্লসিত তাদের পরিবার ও স্বজনরা। জানা যায়,পারিবারিক সূত্রে গোপেশ মোদকের ছেলে গোপিনাথ মোদক স্বপ্নের দেশ ইতালি যাওয়ার জন্য এক দালালের মাধ্যমে ১৫ লক্ষ টাকার চুক্তিবদ্ধ হন। কিন্তু ধাপে ধাফে হাতিয়ে নেন ৭০লক্ষ টাকা,তার পাশাপাশি পাশবিক নির্যাতনের শিকারও হন।পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, এক দালালের মাধ্যমে গোপিনাথকে লিবিয়ায় নিয়ে এক তালাবদ্ধ করে রাখেন এবং লিবিয়া প্রবাসী দালালদের নেতৃত্বে গোপিনাথ অপহরণ হয়। এরপর পরিবারের কাছে ধাপে ধাপে বাংলাদেশি কয়েকটি বিকাশ নাম্বার দিয়ে দাবি করা হয় পাঁচ লাখ টাকা করে মুক্তিপণ। পরে টাকা দেওয়া অশিকার করলেই তার ওপর শুরু হয় নির্যাতন। এক পর্যায়ে অপহরণকারীরা তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়,এভাবে জমি,বসত ভিটা বিক্রি করে পৌঁছাতে পারিনি গোপীনাথ স্বপ্নের দেশ ইতালিতে, জীবনের শেষ মুহূর্তে দেশে ফিরলেন, লিবিয়ার সেনা সদস্যরা উদ্ধার করেন এবং সব আইনি প্রক্রিয়া শেষে ২বছর পর দেশে ফিরে তিনি অপহরণের সেই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেন।   লিবিয়ায় জিম্মি হওয়া গোপিনাথ (২৭) জানান,আমরা কয়েক জন যুবক একটি তালাবদ্ধ ঘরে ছিলাম, রাত আনুমানিক ২টার দিকে ঘরের দরজা খোলার জন্য ডাক দেয়া হয় তাকে। এ সময় তিনি দরজা খোলা মাত্র দুজন ব্যক্তি তার মাথায় পিস্তল ধরে। এরপর ঘরের ভেতরে থাকা মোবাইল, ল্যাপটপ ও টাকা নিয়ে নেন তারা। পরে লাইন করে দাঁড় করিয়ে সবাইকে একটি গাড়িতে তোলা হয়।গাড়িতে উঠার সময় গোপিনাথ দেখেন অপহরণের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের এলাকার লিবিয়া প্রবাসী দালাল।আমি ভাই বলে ডাক দিলে পেছন দিক থেকে বন্দুক দিয়ে তাকে আঘাত করা হয়। পরে কালো কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে দুহাত বাঁধা হয় তার। এরপর থেকেই শুরু হয় অমানবিক নির্যাতন। এক পর্যায় লিবিয়ার সেনা সদস্যরা তাদেরকে উদ্ধার করেন। এরপর লিবিয়ার একটি কারাগারে ৭৫ দিন তাদেরকে রাখা হয়। পরে আরও একটি কারাগারে ১৭ দিন রেখে আইনি প্রক্রিয়া শেষে তাদেরকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়। গোপিনাথ বলেন, ‘অপহরণের পর কথায় কথায় একটি পাইপ দিয়ে আমাদের পায়ের তালুতে মারা হতো। আমাদেরকে ভয়ঙ্করভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। আমি আর বিদেশ যেতে চাই না। দেশেই কিছু করে বাঁচতে চাই।’ অভিভাবকরা জানান, সন্তানকে ফিরে পাবো কখনো ভাবতেই পারেননি। আর যখন ফিরে পেয়েছেন, তখন আর কখনোই পাঠাবেন না বিদেশে। প্রয়োজনে দেশে দিনমজুরি করবে, তবু বিদেশে আর নয়। গোপিনাথ মোদকের বাবা গোপেশ মোদকের কাছে ছেলের পাশবিক নির্যাতনের কথা এবং ব্যয় হওয়া অর্থ সম্পদের সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার জমি এবং ভিটে মাটি সব বিক্রি করে দিয়েছি, এ পর্যন্ত আমার ৭০ লক্ষ টাকা নিয়াছে দালাল চক্র,আমি খুশি, আমার সন্তান আমার বুকে ফিরে এসেছেন।স্বপ্নের দেশ ইতালি গামী যাওয়ার জন্য যারা বেহুশ তাদের বিষয়ে জানতে চাইলে গোপেশ মোদক বলেন,সোনার ছেলেরা এত টাকা খরছ না করে এবং দালালের হাতে নির্যাতনের শিকার না হয়ে দেশে দিনমুজরীর কাজ করা ভাল। এ ব্যাপারে ৬নং বুল্লা ইউপির ৮নং ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধি নজরুল ইসলাম বলেন,শুনেছি গোপিনাথ বাড়ী এসেছেন, ভালই হল মায়ের সন্তান মায়ের কুলে ফিরেছেন।
প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024