|
Date: 2023-03-25 15:51:28 |
সিলেট অঞ্চলে গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে প্রাকৃতিক রুক্ষতা দূর হয়ে গাছ-গাছালিতে প্রাণ ফিরে এসেছে, বিশেষ করে সিলেটের চা বাগানগুলোতে। বৃষ্টির স্পর্শে এ অঞ্চলের প্রধান ফসল বোরো ধানের মাঠ যেন হাসছে।
কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলেন, দীর্ঘ খরার পর এই বৃষ্টি যেন ‘আশীর্বাদ’ হিসেবেই এসেছে। সাধারণত এই অঞ্চলে ডিসেম্বর মাসে কয়েক পশলা বৃষ্টি হয়। কিন্তু এবার ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসেও বৃষ্টি না হওয়ায় টানা খরা চলেছে সিলেটে। অবশ্য ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে সামান্য বৃষ্টি হয়েছিলো। তবে এই বৃষ্টি তেমন সন্তুষ্ট করতে পারেনি চা বাগানগুলোকে। অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর মার্চে সিলেট অঞ্চলের প্রতিটি জেলায় বৃষ্টির ফোঁটায় স্বস্তি ফিরে এসেছে সবার মাঝে। এতে চা গাছে দ্রুত কুঁড়ি গজাতে শুরু করবে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, বৃষ্টির অভাবে অনেক সময় চা-বাগানে ‘রেড স্পাইডার’ রোগসহ নানা ধরণের পোকা মাকড়ের আক্রমণের আশঙ্কা থাকে। এতে চা উৎপাদন হ্রাস পায়। সাধারণত জুন-সেপ্টেম্বর এ ৪ মাসেই উৎপাদিত হয় ৬০ শতাংশ চা।
চা সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত বছর খরা, নানা রোগ এবং চা-শ্রমিকদের টানা অবরোধের কারণে উৎপাদন মারাত্মক হ্রাস পেয়েছিলো। এছাড়া গত ১০ বছরেও চায়ের নিলামে মূল্য না বাড়ার কারণে সেভাবে বাড়ছে না উৎপাদন।
শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের পর্যবেক্ষক বিভলু চন্দ্র দাস বলেন, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলসহ চা শিল্পাঞ্চলে গত রোববার সকাল ৭টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত তিন দফায় ১৫ দশমিক ৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এরপর গত সোমবার থেকে বিচ্ছিন্নভাবে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন স্থানে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হয়।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী পরিচালক সজিব আহমদ বলেন, চলতি মাসে এ পর্যন্ত ১৩৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এ মাসে আরও কয়েকদিন বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এই বৃষ্টি সিলেট অঞ্চলের চা শিল্পের জন্য অনেক উপকারী।
চা বাগানের ব্যবস্থাপকরা জানান, টানা অনাবৃষ্টিতে চা গাছ মরে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। খরার কারণে দুশ্চিন্তায় ছিলেন। এখন বৃষ্টিতে চা গাছ কুঁড়ি ছাড়তে শুরু করেছে।
কুলাউড়ার নূর জাহান চা বাগানের জিএম লুৎফুর রহমান বলেন, এবার আমাদের দু’টি বাগানে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৭ লাখ ৩০ হাজার কেজি। কিন্তু আবহাওয়ার যা অবস্থা ছিল তাতে উদ্বিগ্ন ছিলাম। মার্চের প্রথম দিকে দুঃসহ অবস্থা ছিল। অবশেষে বৃষ্টিতে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
সিলেটের হাবিব নগর চা-বাগানের ব্যবস্থাপক হুমায়ূন কবীর বলেন, চা একটি সংবেদনশীল কৃষিপণ্য। এর জন্য প্রয়োজন সুষম আবহাওয়া ও সঠিক পরিচর্যা। সারাদেশের ১৬৭ চাবাগানের মধ্যে সিলেটেই ১৩৬টি।
বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশনের নর্থ সিলেট ভ্যালির চেয়ারম্যান নোমান হায়দার চৌধুরী বলেন, আশা করছি আরও ভালো বৃষ্টি হবে এবং সংকট পরিস্থিতি কেটে যাবে।
চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আশরাফুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টি চা শিল্পের জন্য সুফল বয়ে এনেছে। এখন চা গাছে দ্রুত নতুন কুঁড়ি আসবে। প্লাকিং শুরু হবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লক্ষ্যমাত্রার ওপরে চা উৎপাদন হবে।
তিনি আরও বলেন, ২০২৩ সালে দেশে ১০ কোটি কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ২০২২ সালেও এই লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু বন্যা ও চা-শ্রমিকদের আন্দোলনসহ নানা কারণে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। তবে ২০২৫ সালের মধ্যে দেশে ১৪ কোটি কেজি চা উৎপাদনের পরিকল্পনা করেছে সরকার। এর মধ্যে ১৩ কোটি কেজি চা দেশের চাহিদা পূরণ করে এবং বাকি ১ কোটি কেজি চা বিদেশে রপ্তানি করা হবে।
© Deshchitro 2024