‘হুইসেল দিলে দিগ্বিদিক ছুটতে থাকে গরু-ছাগল। অনেক সময় রেললাইনেও উঠে পড়ে। আর মানুষ হুইেল দিলেও সরতে চায় না।’ বক্তব্যটি কক্সবাজার এক্সপ্রেসের লোকোমোটিভ মাস্টার আবদুল আওয়াল রানার। রেলের বিভাগীয় কর্তৃপক্ষও বলছে, নতুন রেলপথে অভ্যস্ত হয়নি মানুষ ও প্রাণী। এতে অনেকেই সেলফি তুলতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ছেন। কাটা পড়ছে গবাদিপশুও।
আবদুল আওয়াল রানার বক্তব্যের সত্যতা মিলল আজ বৃহস্পতিবার কক্সবাজার রুটের ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও দেখে। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, সেলফি তুলতে এক যুবকের চোখের নজর স্থির মোবাইল স্ক্রিনে। ট্রেনের দূরত্ব তখন ১০-১৫ ফিটেরও কম। লোকোমোটিভ মাস্টার হুইসেল দিয়েই যাচ্ছেন। কিন্তু চোখ কিছুতেই মোবাইল ফোনের স্ক্রিন থেকে সরছে না। তারপর যা হওয়ার, তাই। ট্রেনের ইঞ্জিনের বাম্পারের সঙ্গে সজোরে ধাক্কা খেলেন। থেঁতলে গেল যুবকের মাথা। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই যুবক।
বৃহস্পতিবার উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের খৈয়ারকুল রেললাইনে এ ঘটনা ঘটে। ট্রেনের সামনে সেলফি নিতে গিয়ে মো. রাশেদ নামের ওই যুবক গুরুতর আহত হন। বর্তমানে মুমূর্ষু অবস্থায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকেরা দ্রুত আইসিইউতে ভর্তির পরামর্শ দিয়েছেন।
রাশেদ সাতকানিয়া উপজেলার উত্তর টেমশা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান রিদুওয়ানের বাড়ির আবদুল্লাহর পুত্র।
রাশেদের মামা মো. ফারুক আজকের পত্রিকাকে জানান, রাশেদের বাড়ি সাতকানিয়ায়। তিনি নানার বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। দুপুরে রাশেদসহ তাঁর মামা বাড়ি থেকে আমিরাবাদের উদ্দেশে ফিরছিলেন। হঠাৎ কক্সবাজার থেকে ট্রেন আসতে দেখে সেলফি তুলতে রেললাইনে দাঁড়িয়ে যান রাশেদ। মুহূর্তেই পেছন থেকে ট্রেন এসে তাঁকে ধাক্কা দেয়। চিকিৎসক বলেছেন, তাঁর মাথায় গুরুতর আঘাত লেগেছে। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণেই আছেন তিনি।
রাশেদের এ ঘটনাই শেষ নয়। কক্সবাজার রেলপথে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের পর থেকে প্রতিদিনই ঘটছে কোনো না কোনো দুর্ঘটনা। গত ৩ ডিসেম্বর কক্সবাজার থেকে রেলের একটি ইঞ্জিন চট্টগ্রামে যাওয়ার পথে হারবাং ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলিফ্যান্ট টানেলে একটি গরু ট্রেনে কাটা পড়ে। মূলত রেলপথটি নতুন হওয়ায় এই পথের মানুষ এখনো সচেতন হয়নি। অভ্যস্ত হয়নি গবাদিপশুও। ফলে ঘটছে দুর্ঘটনা।
লোকোমোটিভ মাস্টার আবদুল আওয়াল রানা বলেন, ‘মানুষকে সচেতন করা দরকার। তবেই দুর্ঘটনা কমবে।’
রেলের বিভাগীয় প্রকৌশলী হাসান মুকুল বলেন, ‘ট্রেনের হুইসেল বাজালেও মাদ্রাসার বেশ কিছু ছাত্রকে রেললাইন থেকে সরে না যেতে দেখেছি। এই পথ নতুন হওয়ায় অভ্যস্ত হয়নি মানুষসহ গবাদিপশু। স্থানীয় প্রশাসন মানুষকে সচেতন করার উদ্যোগ নিতে পারে।’
৯৬টি অনুমোদিত লেভেল ক্রসিং মৃত্যুফাঁদ
দোহাজারী থেকে কক্সবাজার ১০২ কিলোমিটার রেলপথে ৯৬টি অনুমোদিত লেভেল ক্রসিং রয়েছে। এসব ক্রসিংয়ে এখনো নিয়োগ হয়নি স্থায়ী জনবল। অনেক জায়গায় প্রতিবন্ধকতা বা বারও নেই। যখন-তখন পার হচ্ছে যানবাহন আর মানুষ। রেললাইনে উঠে যাচ্ছে শিশুরা। ফলে লেভেল ক্রসিং রক্ষণাবেক্ষণ না থাকায় বিপজ্জনক হয়ে উঠছে এই রেলপথ।
এই প্রকল্পের পরিচালক মো. সুবক্তগীন অবশ্য দাবি করেন, স্থায়ী জনবল নিয়োগ না দিলেও অস্থায়ী জনবল দিয়ে লেভেল ক্রসিং মেনটেইন করা হচ্ছে।
৩০ দিন ৫ ঘন্টা ৩ মিনিট আগে
৪৮ দিন ১০ ঘন্টা ০ মিনিট আগে
৬৫ দিন ৭ ঘন্টা ৩৯ মিনিট আগে
৭৪ দিন ১০ ঘন্টা ১৬ মিনিট আগে
৭৬ দিন ৯ ঘন্টা ৫৭ মিনিট আগে
৮০ দিন ১২ ঘন্টা ১৭ মিনিট আগে
৮০ দিন ১২ ঘন্টা ২০ মিনিট আগে
৯৫ দিন ২৩ ঘন্টা ২৭ মিনিট আগে