ইসরায়েলে নতুন করে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান কাছের মানুষকে আলিঙ্গন করা কেন জরুরি? একদিনে আরও ২৬ জনের করোনা শনাক্ত, মৃত্যু ১ পাল্টা হামলার মুখে যাত্রী ছাড়াই বিদেশে বিমান সরিয়ে নিচ্ছে ইসরায়েল জাতীয় নির্বাচনের তারিখ নিয়ে সমাঝোতা একটি ইতিবাচক দিক : আতিকুর রহমান জামায়াতের ১নং ওয়ার্ড কর্তৃক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত নাগেশ্বরীতে বাণিজ্যমেলা বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন রায়গঞ্জে মাছ ধরতে গিয়ে পানিতে ডুবে ভাই বোনের মর্মান্তিক মৃত্যু সাতক্ষীরা কালিগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতা মোজাহার হোসেন কান্টু গ্রেপ্তার শ্রীপুরে দফায় দফায় হামলা ও ভাঙচুর, অর্ধশতাধিক বাড়িঘর ও দোকানপাটে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ লালপুরে জামায়াতের ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত লালপুরে বিএনপির ঈদ পুনর্মিলনীতে জনতার ঢল! ঈশ্বরগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় ১ জন নিহত সাবেক সংরক্ষিত এমপি’র বাড়িতে যৌথবাহিনীর অভিযান: ইয়াবা-অস্ত্রসহ পুত্র আটক সুন্দরগঞ্জে জামায়াত কর্মী হত্যা মামলায় যুবলীগ নেতা আজম কারাগারে কালাইয়ে দুধর্ষ ডাকাতির ঘটনায় চিকন আলী নামে এক আন্তজেলা ডাকাত দলের সদস্য গ্রেপ্তার পাঁচ ব্যাংক মিলে হচ্ছে এক ব্যাংক, চাকরি হারাবেন না কর্মীরা নেতানিয়াহুর জন্য বিশ্ব আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে’ গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হককে অবরুদ্ধের প্রতিবাদে পীরগাছায় মশাল মিছিল সড়ক দুর্ঘটনায় লালপুরের যুবকের মৃত্যু

ভূমিজ সম্প্রদায়ের প্রথম গ্র্যাজুয়েট অঞ্জন


ভূমিজ সম্প্রদায়ের সন্তান অঞ্জন ভূমিজ। তার সম্প্রদায় থেকেই সে একমাত্র গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছে। উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, ভূমিজ হল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, অসম, ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ড (বিশেষত বৃহত্তর সিংভূম জেলায়) রাজ্যে বসবাসকারী একটি আদিবাসী উপজাতি। তাদের কিছু অংশ সিলেটে বসবাস করছে। সিলেটের মৌলভীবাজারের জুড়ি উপজেলার ফুলতলা চা বাগানের এলবিনটিলা চা পল্লিতে অঞ্জনের জন্ম। 


সে টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (মাভাবিপ্রবি) থেকে সদ্য গ্রাজুয়েশন শেষ করেছেন। এই অর্জনের পেছনের গল্পে রয়েছে চড়াই উত্তরাই হাজারো গল্পকথা। কারণ তার পথ এতটা মসৃণ ছিলনা। বাবা অমৃত ভূমিজ একজন স্থায়ী চা শ্রমিক, মা রতনমনি ভূমিজ অস্থায়ী চা শ্রমিক । মা বাবার এ আয়ে আরো দুই সন্তানের ভরণপোষন চলছে। সংসারে সবার বড় ছেলে অঞ্জন। ছোটবোন অঞ্জলি পড়ছেন এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন- এ। আরেক ছোটবোন এবার উচ্চ মাধ্যমিক এ পড়াশোনা করছে। অদম্য সাহসের এক দৃষ্টান্ত উদাহরণ অঞ্জন।


পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ তৈরির পেছনের গল্প জানতে চাইলে সে বলে, " আমার মা, আমার শিক্ষা গুরু। উনার জন্য আজ আমি এই অবস্থানে। ছোট বেলাতে অনেক খেলাধুলা করতাম। আমার মা আমাকে অনেক বুঝাতেন যে খেলাধুলা করলে কি হবে এবং পড়ালেখা করলে কি কি হবে। লেখাপড়া করলে ভালো চাকরি পাওয়া যাবে। বড় হয়ে নিজের মত করে চলাফেরা করতে পারবো। মা বলতো তর বাবা বাগানের কাজ করে এই আয় দিয়ে অনেক কষ্টে সংসার চলে। তখন বাবার মজুরি মনে হয় ৪০ টাকার মত ছিল। সত্যি বলতে চা বাগানের গরীব পরিবারে জন্ম গ্রহণ না করলে কখনো মাথায় পরিবর্তন এর কথা আসতো না। মা-বাবা যে লেভেলের পরিশ্রম করেন কিন্তু তার ৫০% মজুরি পায় না। কখনো ভালো খাবার, বস্ত্র, থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রেই অভাবের অনটন লেগে থাকতো! এইগুলোই মনে আঘাত আনত এক সময়। তখনি পড়ালেখার প্রতি আরো আগ্রহ বেড়ে যেত। আমি যদি লেখাপড়া না করি তাইলে মা-বাবার মতোই আমাকেও এই চা বাগানের মাঝেই সারাজীবন পড়ে থাকতে হবে। মা তো সব সময় উতসাহ দিত।" গ্রেজুয়েশন সমাপ্তি পর্যন্ত আসতে প্রতিবন্ধকতার প্রসঙ্গে সে জানায়, " প্রতিবন্ধকতা তো অনেক ছিল। যেমন, খাতা কলম, যাতায়াত খরচ থেকে শুরু করে, স্কুল ড্রেস জুতা, টিফিনের খরচ।


আমার শিক্ষাজীবনে কখনো এক ক্লাসে দুই ড্রেস পড়তে পারি নাই। প্রাইমারি স্কুলে হাফ প্যান্ট পড়েই যেতাম। ৫ টা বছর গেছে সারাবছর সেন্ডেল ছাড়ায় স্কুলে গেছি। দুর্গাপূজা আসলে ফুল প্যান্ট এবং জুতা বা সেন্ডেল পড়তাম। হাই স্কুলে ৩ টা শার্টেই ৫ বছর লেখাপড়া করেছি। ৩ কিলোমিটার রাস্তা হেটেই যেতাম।হাই স্কুলে টানা ৪ বছর টিফিন না খেয়েই দিন পার করতে হয়েছে। মাঝে মাঝে কখনো কাকতালীয় ভাবে কেউ খাওয়ালে অথবা কখনো বাসা থেকে টাকা পেলে টিফিন খাইতাম। কারণ বাবা যে মজুরি পেত সেটা দিয়ে অনেক কষ্টে সংসার চলতো। কলেজেও এক ড্রেস দিয়ে ২ বছর শেষ করেছি। আর্থিক অবস্থার কারণে ৩ টা চা বাগানের আত্নীয় স্বজনদের বাসায় থেকে ইন্টার শেষ করেছি। কখনো গাড়িতে যাওয়ার মত টাকা ছিল না, তাই বাই সাইকেল করে ৫/৬ কিলোমিটার রাস্তা হাফ ডাউন করে ক্লাস করতাম। আমার লেখাপড়ার খরচের জন্য আমিও অনেক কাজ করেছি, স্কুলের বেতন দিয়েছি, কলম খাতা কিনেছি।" 


সকল প্রতিবন্ধকতা জয় করে আজ সে তার সম্প্রদায়ের এক অনুপ্রেরণা। ভূমিজ সম্প্রদায়কে নিয়ে অঞ্জনের অনেক স্বপ্ন। সে বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাবার পরেই বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি সংক্রান্ত উৎসাহ নিয়ে প্রচারণা শুরু করে। তার পরেই আরো ৬ জন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ অধ্যয়নরত। অনেকেই ন্যাশনাল কলেজের আবেদন করে দেয় আজ ওরা অনার্সে পড়ছে। এক সময় অঞ্জন অনলাইনে চা বাগানের ছাত্রছাত্রীদের জন্য ফ্রি অনলাইন ক্লাস চালু করে । ভবিষ্যতে ভূমিজ সম্প্রদায়ের জন্য সুফল বয়ে আনবে এমন কিছু করার ইচ্ছা আছে অঞ্জনের।



আরও খবর