লালপুরে পদ্মার চরে চীনা বাদামের বাম্পার ফলন পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়ন জামায়াতের কর্মী বৈঠক সম্পন্ন চাটখিলের কৃতি সন্তান টিপুর রেইনহ্যামে ক্রিকেট গল্প ডোমারে ইউএনআইপি'র বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত ডোমারে প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতাল সিলগালা, গ্রেপ্তার-৩ আশাশুনিতে মাদক ব্যবসায়ী ও জুয়াড়ি খোকন গাঁজাসহ গ্রেফতার মোংলা বন্দরে আসলো ভারত থেকে দুই জাহাজ চাল কালিগঞ্জে গৃহবধূর জমি দখলের অভিযোগ, নিরাপত্তাহীনতায় এক পরিবার লালপুরে আ.লীগ নেতা মঞ্জু হত্যার প্রধান আসামি টুমণ গ্রেফতার। গুচ্ছে নিকটস্থ বিশ্ববিদ্যালয়ে করা যাবে প্রাথমিক ভর্তির নিশ্চয়ন, ভর্তি শুরু ২২জুন বরিশালে কিশোর গ্যাং বাহিনীর হামলা চার শিক্ষার্থী আহত, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত দ্রুত ইসিকে জানান, সরকারের প্রতি সালাহউদ্দিন সাতক্ষীরা জেলা আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক মাসিক সভায় অনুষ্টিত সুন্দরবনে প্রবেশে ৩ মাসের নিষেধাজ্ঞা, অভাবে ধুঁকছে বনজীবিদের পরিবার সাতক্ষীরায় ২২ দিনেও সন্ধান মেলেনি ইটভাটা ব্যবসায়ীর ঢাকায় বজ্রবৃষ্টির পূর্বাভাস গুম প্রতিরোধে এক মাসের মধ্যে আইন, গঠিত হচ্ছে শক্তিশালী কমিশন সাতক্ষীরায় জলবায়ু অধিপরামর্শ ফোরামের সভা তাণ্ডবে পাইরেসির হানা ট্রাক মালিককে হয়রানির অভিযোগে পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে

ইউএনওর উদ্যোগে জীবন বদলে গেল হকার মাহীর


কিশোর বয়সে জীবিকার তাগিদে পত্রিকা বিক্রি করে সংসার চালানোর দায়িত্ব নেওয়া মাহী ফিরে এলো শিক্ষায় আলোয়। 


নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ ইমরানুল হক ভূঁইয়ার চেষ্টা ও আন্তরিকতায় পাল্টে গেছে হকার আবু সালেহ মাহীর(১৫) জীবন। মাহী উপজেলার পরকোট ইউনিয়নের পূর্বশোশালিয়া গ্রামের আব্দুল কাদের লালনের ছেলে।


এক সময় মাহির যে হাতে সংবাদপত্রের হকারী করত, বর্তমানে সে হাতে উঠেছে বই -খাতা, কলম। মাহী পরকোট ইউনিয়নের দশঘরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ব্যবসা শিক্ষা বিভাগের ছাত্র।


ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মায়ের মৃত্যুর পর মাহীর জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। মায়ের চিকিৎসা করাতে গিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন মাহীর বাবা। ২০১৯ সালে এক দুর্ঘটনায় মাহীর বাবা ঘরবন্দী হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে করোনা মহামারির সময় স্কুল বন্ধ হয়ে গেলে অভাবের তাড়নায় মাহী কিছু দিন টাইলসের কাজ করেন। সেখানে কষ্ট সহ্য করতে না পেরে পত্রিকার হকারের পেশায় যোগদেন মাহী। একদিন পত্রিকা দিতে গিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ ইমরানুল হক ভূঁইয়া তার পেশা সম্পর্কে জানতে চান।


পড়াশোনার ইচ্ছা আছে কিনা জানতে চাইলে মাহী বলে, আমারও ইচ্ছে করে বই নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কিন্তু বাবার আয় নেই, আমার আয় দিয়েই সংসার চলে। তারপর মাহির সংসার ও পড়াশোনার দায়িত্ব নেন চাটখিল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ ইমরানুল হক ভূঁইয়া।


আবু সালেহ মাহীর জানান, আমার মা নেই। বাবা নিরুপায় হয়ে আমাকে কাজে দিয়েছেন। আমি প্রতিদিন পত্রিকা দিতে ইউএনও স্যারের অফিসে যেতাম। ইউএনও স্যারের মনে দয়া হয়েছে। তাই আমার পড়াশোনা ও সংসারের দায়িত্ব তিনি নিয়েছেন। স্যারের প্রতি আমি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব। আমি মানুষের মতো মানুষ হতে চাই, বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চাই। একজন আদর্শ শিক্ষক হয়ে মানুষের সেবা করতে চাই।


মাহির বাবা বলেন, ইউএনও স্যার অনেক ভালো মানুষ। আমার সন্তানের প্রতি তিনি যে দায়িত্ব পালন করেছেন সেটি মূলত বাবা হিসেবে আমার পালন করার কথা ছিল কিন্তু অভাবের কারণে আমি সেই দায়িত্ব পালন করতে পারিনি। ইউএনও স্যারের এই ঋণ আমি কোনদিন শোধ করতে পারবোনা।


চাটখিল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ ইমরানুল হক ভূঁইয়া বলেন, আমি চাটখিল উপজেলায় যোগদানের পর থেকেই দেখতাম মাহীর নামের ছোট্ট ছেলে আমাকে পত্রিকা দিতে আসতো। সে এখানকার প্রেসক্লাবের হকার ছিল। এক দুই দিন আসার পর ছেলেটার চোখে আমি মেধা ও সম্ভাবনা দেখতে পেয়েছি। আমি তার থেকে খবর নেই জানতে পারি তার বাবা শারিরীক ভাবে অক্ষম ফলে তার আয় দিয়েই সংসার চলে। তারপর তার স্কুলের শিক্ষকের সাথে কথা বলে পড়ার ব্যবস্থা করে দেই। মাহীর বাবা জানায় মাহিরের বেতনের টাকায় তাদের সংসার চলে। আমি ব্যক্তিগত তহবিল থেকে তাকে মাসে সাড়ে তিন হাজার টাকা করে দেই। অনেকেই মাহিকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। বছরের শুরুতে একটি সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে স্কুলের ব্যাগ, জুতো, বইয়ের ব্যবস্থা করি। বর্তমানে তাকে চার হাজার টাকা করে দেই।


সমাজের বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ইউএনও বলেন, মাহি আমার ছোট ভাইয়ের মতো। আমাদের আশপাশে অনেক মাহী আছেন যারা একটু সুযোগের অভাবে পড়াশোনা করতে পারছেন না। বিত্তবান যারা আছেন তারা যদি এসব মাহির পাশে সহানুভূতি নিয়ে তাকাই তাহলে অনেকের জীবন বদলে যেতে পারে। এতে খুব বেশি খরচ হবে না, কিন্তু শিক্ষার মতো একটি মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে না।


নোয়াখালী-১ (চাটখিল-সোনাইমুড়ী) আসনের সংসদ সদস্য এইচ এম ইব্রাহিম বলেন, নতুন প্রজন্মের যারা ইউএনও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তারা স্বাধীনতার স্বপক্ষের মানুষ। তাদের বাবা মুক্তিযোদ্ধা ছিল, দাদা মুক্তিযোদ্ধা ছিল অথবা নানা মুক্তিযোদ্ধা ছিল। তার ভেতরে মানবিকতার মূল্যবোধ আছে বলেই তারা এমন উদ্যোগ নিয়েছেন। আসলে মন থেকে না এলে এমন কাজ করা যায় না। তিনি আমাকে বিষয়টি শেয়ার করেছেন আমি বলেছি আপনি যেখানে ঠেকে যাবেন আমাকে জানাবেন। আমি সার্বিক সহযোগিতা করব।

আরও খবর