শ্রীপুরে এটিএম বুথে কিশোরী ধর্ষণের অভিযোগ, নিরাপত্তাকর্মী পলাতক। লালপুরে পদ্মার চরে চীনা বাদামের বাম্পার ফলন পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়ন জামায়াতের কর্মী বৈঠক সম্পন্ন চাটখিলের কৃতি সন্তান টিপুর রেইনহ্যামে ক্রিকেট গল্প ডোমারে ইউএনআইপি'র বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত ডোমারে প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতাল সিলগালা, গ্রেপ্তার-৩ আশাশুনিতে মাদক ব্যবসায়ী ও জুয়াড়ি খোকন গাঁজাসহ গ্রেফতার মোংলা বন্দরে আসলো ভারত থেকে দুই জাহাজ চাল কালিগঞ্জে গৃহবধূর জমি দখলের অভিযোগ, নিরাপত্তাহীনতায় এক পরিবার লালপুরে আ.লীগ নেতা মঞ্জু হত্যার প্রধান আসামি টুমণ গ্রেফতার। গুচ্ছে নিকটস্থ বিশ্ববিদ্যালয়ে করা যাবে প্রাথমিক ভর্তির নিশ্চয়ন, ভর্তি শুরু ২২জুন বরিশালে কিশোর গ্যাং বাহিনীর হামলা চার শিক্ষার্থী আহত, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত দ্রুত ইসিকে জানান, সরকারের প্রতি সালাহউদ্দিন সাতক্ষীরা জেলা আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক মাসিক সভায় অনুষ্টিত সুন্দরবনে প্রবেশে ৩ মাসের নিষেধাজ্ঞা, অভাবে ধুঁকছে বনজীবিদের পরিবার সাতক্ষীরায় ২২ দিনেও সন্ধান মেলেনি ইটভাটা ব্যবসায়ীর ঢাকায় বজ্রবৃষ্টির পূর্বাভাস গুম প্রতিরোধে এক মাসের মধ্যে আইন, গঠিত হচ্ছে শক্তিশালী কমিশন সাতক্ষীরায় জলবায়ু অধিপরামর্শ ফোরামের সভা তাণ্ডবে পাইরেসির হানা

বিলুপ্তির পথে প্রাকৃতিক শিল্পী বাবুই পাখি

ছোট্ট পাখি বাবুই। বিলের ধারে বা গ্রামীণ সড়কের পাশে তালগাছ ঘিরেই তাদের বসবাস। একসময় বাবুই পাখির বাসা আর কিছিরমিছির কলবর জুড়েই থাকবো গ্রাম-বাংলার আবহমান জনপদ। তবে কালের বিবর্তনে আজ প্রায় বিলুপ্ত প্রাকৃতিক শিল্পের কারিগর এই বাবুই পাখি ও তার বাসা।
কবি বলেছেন-
"বাবুই পাখিরে ডাকি’ বলিছে চড়াই,
কুঁড়ে ঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই?
আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পরে
তুমি কত কষ্ট পাও রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ে!

বাবুই হাসিয়া কহে, সন্দেহ কি তায়!
কষ্ট পাই, তবু থাকি নিজের বাসায়;
পাকা হোক্, তবু ভাই, পরের ও-বাসা;
নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর—খাসা!"
বাসা তৈরিতে যার নিপুণ কাজ করে সেইতে শিল্পি, আর সে তো শিল্পের বড়াই করতেই পারে। কবি রজনীকান্ত সেনের কালজয়ী কবিতাটির নায়ক গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী বাবুই পাখি আজ বিলুপ্তির পথে। তাল গাছের স্বল্পতা, জলবায়ুর পরির্বতন ও প্রকৃতিক বিপর্যয়ের কারণেই এমনটি হচ্ছে। এক সময় গ্রামাঞ্চলে তালগাছের পাতায় পাতায় দেখা যেত বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা; এখন আর গ্রামের পথ ধরে অনেক সময় হাঁটলেও বাবুই ও তার বাসা চোখে মেলা ভার।
বাবুই সাধারণত খড়, ঝাউ, তালপাতার আঁশ ও কাশবনের আঁশ দিয়েই উঁচু তালগাছের ডগার মাথায় ঝুলন্ত পাতায় এবং খেজুরগাছে বাসা বাঁধে। বাসা বানাতে বাবুই খুবই পরিশ্রম করে থাকে। ঠোঁট দিয়ে বনজাতীয় ঘাস ও কাশবনের চিকন চিকন আস্তরণ দিয়ে বাসা বোনে বাবুই। বাসা পেট দিয়ে ঘষে অর্থাৎ পলিশ করে মসৃণ করে থাকে। শক্ত বুননের সাথে শিল্পের অনন্য সমন্বয় বাসাকে দেখতে খুব সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে তোলে। তার বাসা এতটাই মজবুত যা প্রবল বাতাসেও ছিঁড়ে পড়ে না।
প্রাকৃতিক শিল্পি বাবুই পাখি বাসা তৈরির শুরুতে বাসার নিম্নমুখে দু’টি গর্ত করে। কিন্তু বাসা তৈরি সম্পূর্ণ হলে এক দিকের গর্ত বন্ধ করে তাতে ডিম রাখার স্থান তৈরি করে। আর অপর দিকটি লম্বা করে প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ তৈরি করে। বাসা তৈরির কাজের একপর্যায়ে পুরুষ বাবুই পাশের বাবুইয়ের বাসায় গমন করে সঙ্গীর খোঁজে। সঙ্গী পছন্দ হলে পুরুষ বাবুই পাখি স্ত্রী বাবুই পাখিকে সঙ্গী বানানোর জন্য ভাব-ভালোবাসা নিবেদন করে। সেই সাথে বাসা তৈরির কাজ অর্ধেক হতেই স্ত্রী বাবুইকে কাক্সিক্ষত বাসা দেখায়। কারণ বাসা পছন্দ হলেই কেবল স্ত্রী বাবুই সম্পর্ক গড়ে তোলে। স্ত্রী বাবুই পাখি বাসা পছন্দ হলে বাকি কাজ শেষ করতে পুরুষ বাবুই পাখির সময় লাগে মাত্র চার থেকে পাঁচ দিন।
স্ত্রী পাখির প্রেরণায় পুরুষ বাবুই পাখি মনের আনন্দে বিরামহীনভাবে বাসা তৈরির কাজ শেষ করে। একটি পুরুষ বাবুই পাখি একটি মৌসুমে প্রায় পাঁচ থেকে ছয়টি বাসা তৈরি করতে পারে। তবে প্রেমিক বাবুই পাখি যতই ভাব-ভালোবাসা প্রকাশ করুক না কেন প্রেমিকা বাবুই পাখি ডিম দেয়ার সাথে সাথে প্রেমিক বাবুই আবার সঙ্গী খোঁজার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
মাত্র ১৫-১৬ বছর আগেও গ্রামের তালগাছে চোখে পড়ত বাবুই পাখির বাসা। বাবুই পাখির গোশত সুস্বাদু বলে শিকারিদের সেরা তালিকায় বাবুই। নির্বিচারে তালগাছসহ বাবুই পাখির বাসা বানানোর গাছ কাটায় বসবাস উপযোগী পরিবেশ কমেছে। কীটনাশকের অবাধ ব্যবহার, শিকারিদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবেই আজ এসব পাখি বিলুপ্তির পথে বলে গবেষকদের মত। সাধারণত তিন প্রজাতির বাবুই দেখা যায়। দেশী, দাগি এবং বাংলা। তার মধ্যে দাগি এবং বাংলা বাবুই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তবে দেশী বাবুই এখনো কিছু কিছু চোখে পড়ে।
পরিবেশবিদেও মতে, শুধু বাবুই পাখির শৈল্পিক নিদর্শন টিকিয়ে রাখতে নয়; বরং আমাদের পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতেই বাবুইকে টিকিয়ে রাখতে হবে। বাবুইসহ অন্যান্য প্রাণী ও পাখি যখন পরিবেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে তখন এই পরিবেশ যে দিন দিন মানুষের জন্যেও অনুপযোগী হচ্ছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
প্রাণীবিদরা বলছেন, এখনো কিছু জায়গায় বাবুই পাখিসহ অন্যান্য পাখি দেখা যায়। তবে সবাইকে নিজ এলাকার বিষয়ে সচেতন হতে হবে। তাহলেই কেবল বাবুইসহ অন্য পাখি ও প্রাণি সংরক্ষণ সম্ভব।

Tag
আরও খবর