ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত দ্রুত ইসিকে জানান, সরকারের প্রতি সালাহউদ্দিন সাতক্ষীরা জেলা আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক মাসিক সভায় অনুষ্টিত সুন্দরবনে প্রবেশে ৩ মাসের নিষেধাজ্ঞা, অভাবে ধুঁকছে বনজীবিদের পরিবার সাতক্ষীরায় ২২ দিনেও সন্ধান মেলেনি ইটভাটা ব্যবসায়ীর ঢাকায় বজ্রবৃষ্টির পূর্বাভাস গুম প্রতিরোধে এক মাসের মধ্যে আইন, গঠিত হচ্ছে শক্তিশালী কমিশন সাতক্ষীরায় জলবায়ু অধিপরামর্শ ফোরামের সভা তাণ্ডবে পাইরেসির হানা ট্রাক মালিককে হয়রানির অভিযোগে পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে মোংলায় বাস যাত্রীদের থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান জয়পুরহাটের পাঁচবিবি থেকে মুল্যবান কষ্টিপাথরের বিষ্ণু মূর্তিসহ ০২ জন গ্রেপ্তার নড়িয়ায় উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বাল্যবিবাহ বন্ধ শেরপুরের শ্রীবরদীতে সুদের টাকা না পেয়ে গাছে বেঁধে ব্যবসায়ীকে নির্যাতন জয়পুরহাটে সড়ক দুর্ঘটনায় ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত-১, শিশুসহ আহত ৫ নোয়াখালীতে এসিড নিক্ষেপের ভয় দেখায় জোরপূর্বক দর্শন গ্রেপ্তার ১ সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক কক্ষে আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক মাসিক সভা অনুষ্ঠিত ইসরায়েলে নতুন করে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান কাছের মানুষকে আলিঙ্গন করা কেন জরুরি? একদিনে আরও ২৬ জনের করোনা শনাক্ত, মৃত্যু ১ পাল্টা হামলার মুখে যাত্রী ছাড়াই বিদেশে বিমান সরিয়ে নিচ্ছে ইসরায়েল

কখন করতে হবে তায়াম্মুম? জেনে নিন নিয়ম

দেশচিত্র নিউজ ডেস্ক

প্রকাশের সময়: 25-12-2023 02:38:35 am

ওজু বা গোসলের পরিবর্তে মাটি দিয়ে পবিত্রতা অর্জনের বিকল্প পন্থা হলো তায়াম্মুম। কখনও যদি এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়- কোনো স্থানে পবিত্রতা অর্জনের জন্য পর্যাপ্ত পানি নেই, কিংবা পানি ব্যবহার ব্যক্তির জন্য ক্ষতিকর- আর এমন পরিস্থিতিতে ইসলাম কিছু নিয়ম অনুসরণের মাধ্যমে তায়াম্মুম করার অনুমতি দিয়েছে।


তায়াম্মুমের বিধান

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলা তায়াম্মুমের বিধান সম্পর্কে পবিত্র কোরআনুল কারিমে ইরশাদ করেন, ‘আর যদি তোমরা অসুস্থ হয়ে থাকো কিংবা সফরে থাকো অথবা তোমাদের মধ্য থেকে কেউ যদি প্রস্রাব-পায়খানা থেকে এসে থাকে, কিংবা নারীগমন করে থাকো, কিন্তু পরে যদি পানিপ্রাপ্তির সম্ভাবনা না পাও, তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও। মুখমণ্ডল ও হাত মাসেহ করে নাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল’। (সূরা: নিসা, আয়াত: ৪৩)


তায়াম্মুমের বিধান স্বীকৃত হওয়ার কারণ হলো মানুষ অপারগতার সময়ও যেন ইবাদত থেকে বঞ্চিত না হয়। এটি উম্মতে মুহাম্মাদির ওপর আল্লাহ তাআলার বিশেষ দয়ার অন্তর্ভুক্ত। এ সম্পর্কে হাদিস শরিফে এসেছে, ‘আগের নবীদের উম্মত থেকে এই উম্মতকে তিন বিষয়ে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। আমাদের কাতার ফেরেশতাদের কাতারের মতো বানানো হয়েছে, সারা ভূখণ্ডকে আমাদের জন্য মসজিদ বানিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং পানি না পাওয়া অবস্থায় মাটিকে পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম বানানো হয়েছে’। (বুখারি: ১/২০৯)


তায়াম্মুম কাকে বলে

তায়াম্মুম শব্দের অর্থ হলো ইচ্ছা করা। শরিয়তের পরিভাষায় পবিত্রতার নিয়তে পবিত্র মাটির ওপর হাত মেরে চেহারা ও কনুই পর্যন্ত হাত মাসেহ করাকে তায়াম্মুম বলা হয়। (আল ফিকহুল ইসলামি: ১/৪৯৮)


তায়াম্মুমের পদ্ধতি

উভয় হাতের কাপড়গুলো কনুইয়ের উপরে উঠিয়ে নেবে। তায়াম্মুম দ্বারা নামাজ পড়ার নিয়ত করে বিসমিল্লাহ পাঠ করবে। নিজের উভয় হাতের তালুকে আঙুলগুলো খোলা রেখে মাটির ওপর রাখবে। হাতকে মাটির ওপর সামান্য ঘষবে। তারপর উভয় হাত উঠিয়ে ঝেড়ে ফেলবে। এরপর পুরো মুখমণ্ডল মাসেহ করবে। অতঃপর আগের মতো উভয় হাতের তালু আঙুল খোলা রেখে মাটির ওপর রেখে সামান্য ঘষবে। এরপর নিজের বাঁ হাত দ্বারা ডান হাত কনুই পর্যন্ত মাসেহ করবে। এরপর ডান হাত দিয়ে বাঁ হাত কনুই পর্যন্ত মাসেহ করবে। তাতে তায়াম্মুম পরিপূর্ণ হয়ে যাবে। এরপর ফরজ, নফল সব ধরনের ইবাদত আদায় করতে পারবে। (কিতাবুল আসার লি আবি ইউসুফ: ৭৭; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ১/১৬০)


তায়াম্মুম বিশুদ্ধ হওয়ার শর্ত

আটটি শর্ত একসঙ্গে পাওয়া না গেলে তায়াম্মুম শুদ্ধ হবে না। যেমন-


১. নিয়ত করা। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক: ১/২৩২)


২. এমন কোনো ওজর (অপারগতা) থাকা, যার কারণে তায়াম্মুম বৈধ হয়। যেমন-


(ক) ব্যক্তি ও পানির মধ্যের দূরত্ব এক মাইল বা এর চেয়ে বেশি হওয়া। (দারাকুতনি: ৭৩১, ৭৩৪)

(খ) পানি ব্যবহারের কারণে রোগ সৃষ্টি বা বৃদ্ধির সমূহ সম্ভাবনা অথবা প্রাণ বা অঙ্গহানির আশঙ্কা হলে। (দারাকুতনি: ৭৩১; কিতাবুল আসার: ৭৪; সুনানে কুবরা লিল বায়হাকি: ১১০৫)

(গ) পানি এত কম যে ব্যবহার করে ফেললে নিজে অথবা অন্যরা পিপাসাকাতর হয়ে পড়বে। (সুনানে কুবরা: ১১৪৯)

(ঘ) পাশেই কূপ বা পুকুর আছে, কিন্তু পানি এত নিচে যে তা থেকে পানি উঠানোর কোনো ব্যবস্থা নেই। (সহিহ বুখারি: ২/৬১)

(ঙ) পানি কাছেই আছে, কিন্তু দুশমন অথবা ভয়ংকর কোনো পশু-প্রাণীর কারণে পানি অর্জন করতে অপারগ (সহিহ বুখারি: ২/৭২)

(চ) প্রবল ধারণা যে ওজু করতে গেলে ঈদ বা জানাজার নামাজ ছুটে যাবে, তখন তায়াম্মুম করা যাবে। কারণ সেগুলোর কাজা বা বিকল্প নেই। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক: ৩/৩০০; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ১১৫৮৬)


(৩) তায়াম্মুম করতে হবে পবিত্র মাটি অথবা মাটিজাত বস্তু দ্বারা। যেমন- পাথর, বালু, ধুলা ইত্যাদি। সুতরাং গাছপালা, সোনা, রুপা ইত্যাদি দ্বারা তায়াম্মুম জায়েজ নেই। (সূরা: নিসা, আয়াত: ৪৩; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ১৭১৬)


(৪) পুরো মুখমণ্ডল এবং কনুই পর্যন্ত হাত মাসেহ করা। (সূরা: নিসা: ৪৩; দারাকুতনি: ৭১২)


(৫) হাতের পুরো তালু অথবা বেশির ভাগ দ্বারা মাসেহ করা। যদি কেউ দুই আঙুল দ্বারা মাসেহ করে তাহলে তায়াম্মুম সহিহ হবে না। (দারাকুতনি: ৭১২; ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/৩৬৮) 


(৬) উভয় হাতের তালু মাটির ওপর দুইবার মারা- একবার চেহারা মাসেহের জন্য, আরেকবার উভয় হাত মাসেহের জন্য। একই স্থানে দুইবার মারলেও তায়াম্মুম হয়ে যাবে। একইভাবে যদি শরীরে মাটি লেগে থাকে তাহলে তায়াম্মুমের নিয়তে মাসেহ করলেও তায়াম্মুম হয়ে যাবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ১/১৬১)


(৭) মাসেহ করার সময় চামড়ার ওপর কোনো প্রতিবন্ধক বস্তু থাকতে পারবে না; যেমন- মোম, চর্বিজাত দ্রব্য ইত্যাদি। যদি থাকে তাহলে ওসব বস্তু অপসারণ করা আবশ্যক; অন্যথায় তায়াম্মুম শুদ্ধ হবে না। (বায়হাকি: ৩৬৭)


(৮) তায়াম্মুম চলাকালে তায়াম্মুমবিরোধী কোনো বিষয় না থাকা বা কাজ না করা; যেমন- নারীদের ক্ষেত্রে মাসিক, নেফাস অথবা প্রস্রাব-পায়খানা চলাকালে তায়াম্মুম করা। এ অবস্থায় তায়াম্মুম করলে তা শুদ্ধ হবে না। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক: ১/১৮১)


তায়াম্মুমের ফরজ


তায়াম্মুমের ফরজ দুটি। যথা- (১) পুরো চেহারা একবার মাসেহ করা। (২) উভয় হাত কনুই পর্যন্ত মাসেহ করা। (দারাকুতনি: ৬৯৭)


তায়াম্মুমের সুন্নত

তায়াম্মুমের সুন্নতগুলো হলো-


(১) তায়াম্মুমের শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া। (জমউল জাওয়ামে: ১/১৫৭৮৭)

(২) ধারাবাহিকতা রক্ষা করা। (আবু দাউদ: ২৭৯)

(৩) মুখমণ্ডল ও হাত মাসেহ করার মাঝখানে অন্য কোনো কাজ না করা। (আবু দাউদ: ২৭২)

(৪) মাটির মধ্যে হাত আগে-পিছে নড়াচড়া করা। (দারাকুতনি: ৬৯৭)

(৫) মাটির ওপর হাত মারার পর উভয় হাত ঝেড়ে ফেলা। (মুসলিম: ৫৫৩; ইবনে মাজাহ: ৫৬৩)

(৬) মাটির ওপর হাত রাখার সময় আঙুলগুলো খোলা রাখা। (দারাকুতনি: ৬৯৭)


তায়াম্মুম নষ্ট হওয়ার কারণগুলো হলো-


(১) যেসব কারণে ওজু ভেঙে যায়, সেসব কারণে তায়াম্মুমও ভেঙে যায়। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ১/১৬০)

(২) পানি ব্যবহারে সক্ষম হয়ে গেলে, তায়াম্মুমের অনুমতি প্রদানকারী অপারগতা দূর হয়ে গেলে তায়াম্মুম ভেঙে যাবে। যেমন- দুশমনের ভয় খতম হয়ে গেলে, রোগের আশঙ্কা শেষ হয়ে গেলে ইত্যাদি। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ১/১৯২)


তায়াম্মুমের আরো কিছু মাসয়ালা-মাসায়েল

কেউ যদি জানাজার নামাজ বা তেলাওয়াতে সেজদার জন্য তায়াম্মুম করে, তাহলে ওই তায়াম্মুম দিয়ে যেকোনো নামাজ পড়া যাবে। (তিরমিজি: ১১৫)


যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশের নিয়তে তায়াম্মুম করে, তার জন্য ওই তায়াম্মুম দিয়ে নামাজ পড়া জায়েজ হবে না। যে লোক কবর জিয়ারত বা মৃতকে দাফন করার জন্য তায়াম্মুম করবে, সে ওই তায়াম্মুম দ্বারা নামাজ পড়লে সহিহ হবে না। (সহিহ বুখারি: হা. ১; হেদায়া: ১/২৭)


যে লোকের আশা আছে যে ওয়াক্ত চলে যাওয়ার আগেই ইনশাআল্লাহ পানি পাওয়া যাবে, তার জন্য তায়াম্মুমে বিলম্ব করা মোস্তাহাব। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ১/১৬০)


যাকে কেউ পানি দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে, তার জন্য তায়াম্মুমে বিলম্ব করা জরুরি। যার কাছে সামান্য পানি আছে, যা রুটি তৈরির জন্য খামিরা করতে লাগবে, সে পানি দ্বারা খামিরা তৈরি করবে, নামাজের জন্য তায়াম্মুম করবে। কিন্তু যার কাছে সামান্য পানি আছে, যা তরকারি রান্না করতে লাগবে, তাহলে ওই পানি দ্বারা ওজু করবে, তরকারি রান্না করবে না। (সুনানে কুবরা লিল বায়হাকি: ১১৪৮)


যদি কোনো ব্যক্তি এমন স্থানে থাকে, যেখানকার লোকেরা পানি দান করতে কার্পণ্য করে না, তাহলে তাদের কাছে পানি চাওয়া জরুরি। কিন্তু যেখানকার লোকেরা পানি দান করতে কার্পণ্য করে, সহজে পানি দেয় না, সেরূপ স্থানে কারো থেকে পানি চাওয়া জরুরি নয়; বরং তায়াম্মুম করতে পারবে। (সহিহ বুখারি: ১৩৩৯; কাশফুল খেফা: ১/১২৪)


উভয় পা ও উভয় হাত কর্তিত ব্যক্তির মুখে জখম হলে পবিত্রতা অর্জন ছাড়াই নামাজ পড়বে। যদি বেশির ভাগ অঙ্গ বা অর্ধাঙ্গ আহত হয় তাহলে তায়াম্মুম করবে। যদি বেশির ভাগ অঙ্গ ভালো থাকে, তাহলে ওজু করবে, আর আহত স্থানে মাসেহ করবে। (সূরা: বাকারা, আয়াত: ২৮৬; মুআত্তা মুহাম্মদ: ২/৫৮৭)


ইয়া আল্লাহ! মুসলিম উম্মাহকে তায়াম্মুমের সঠিক বিধি-বিধান জানার, বুঝার ও যথাযথ ভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।